নাহিদসহ ৩ সমন্বয়ক হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার

নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পস্ন্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। তারা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদল ব্যক্তি সাদা পোশাকে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডির ওই হাসপাতাল থেকে তাদের তুলে নিয়ে যান। সে সময় ওই ব্যক্তিরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ তথ্য জানান। পরে রাতে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম রাত সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না- তা জানতে চাওয়া হবে। এই তিনজনকে এর আগেও একবার তুলে নেওয়া হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে সারাদেশে 'কমপিস্নট শাটডাউন' বা 'সর্বাত্মক অবরোধ' কর্মসূচি দেওয়ার পর ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়। ২১ জুলাই ভোরে পূর্বাচল এলাকায় তাকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এর পর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই আসিফকে হাতিরঝিল ও বাকেরকে ধানমন্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে আসিফও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে তার সঙ্গে থাকছিলেন বাকের। শুক্রবার তিনজনকে তুলে নেওয়ার খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যান। নাহিদ হাসপাতালের ৭০৩ নম্বর কক্ষে এবং আসিফ ৩১১ নম্বর কক্ষে ভর্তি ছিলেন। নাহিদের সঙ্গে তার স্ত্রী আর আসিফের সঙ্গে বাকের ছিলেন। হাসপাতালে উপস্থিত নাহিদের স্বজনরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে প্রথমে নাহিদকে তুলে নিয়ে যান। পরে আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান। নাহিদকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সঙ্গে থাকা তাদের স্বজন ফাতিমা তাসনীম বলেন, বিকালে তিনি নাহিদের কক্ষেই ছিলেন। হাসপাতালের যে ছেলেটি খাবার দিত তাকে আটক করা হয়েছে এমন খবর শুনে তিনি নাহিদের কক্ষ থেকে আসিফের কক্ষে যান। তখন চারজন ব্যক্তি আসিফ ও বাকেরকে ধমকাচ্ছিলেন। ফাতিমা তাসনীম বলেন, 'ওই ব্যক্তিরা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহিঁচড়া শুরু করলে আমি ও হাসপাতালের নার্সরা তাদের বলি, রোগীদের ডিসচার্জ (ছাড়পত্র) দেওয়া হয়নি। তখন ওই ব্যক্তিরা নার্সদের ইনচার্জকে বলেন, "আমাদের চেনেন? কাউন্টার টেররিজম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে?" এরপর কোনো কথা না শুনে তারা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান। দুজনের মুঠোফোনও নিয়ে যান। এরপর জানতে পারি, নাহিদকেও তুলে নেওয়া হয়েছে।' আসিফ মাহমুদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকাল ৭টার দিকে হাসপাতালে এসে তিনি আসিফ মাহমুদের কক্ষের সামনে অপরিচিত তিন ব্যক্তিকে দেখতে পান। পরে আরও সাত-আট ব্যক্তি আসেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন এসে আসিফকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। এ সময় চিকিৎসককে সরে যেতে বলেন। ওই চিকিৎসক বলেন, 'আমি তাদের বলি, ডিসচার্জ না করে কোনো রোগীকে আমরা ছাড়তে পারি না। আসিফের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তিনি ডিসচার্জের উপযোগী ছিলেন না। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কিছু একটা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে যেতে চাননি। আমরাও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু তাদের চাপাচাপির কারণে বাধ্য হয়ে তাকে ডিসচার্জ অন রিস্ক বন্ড করতে হয়।' ওই ব্যক্তিদের চাপের মুখে আসিফের মতো নাহিদ ইসলামকেও তার নিজ দায়িত্বে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়। এদিকে, শনিবার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে আমরা শুক্রবার দিবাগত রাতে নিয়ে এসেছি। তারা বিভিন্ন জায়গা, ফেসবুকে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছিলেন। তাদের একজনের বাবাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বিভিন্ন জায়গা বলেছেন। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে কেউ যদি কোথাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে, আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। তাদের ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করছি।'