নিত্যপণ্যের বাজার দর

সরবরাহ কম, দামও চড়া

চিংড়ি, ইলিশ, রূপচাঁদা, ছোট ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩

যাযাদি রিপোর্ট
চলমান কোটা আন্দোলনের ফলে সারাদেশ থেকে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ জন্য রাজধানীতে কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্য সরবরাহ কমে গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পণ্য ঢাকায় ঢুকেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে হু হু করে দামও বেড়ে গেছে এসব পণ্যের। যেসব পণ্য এসেছে, তা ঢাকার আশপাশের- বিশেষ করে সাভার থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এর মধ্যে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্য নিয়ে রোববার রাতেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন। পরের দিন সোমবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পস্ন্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এরপর আন্দোলনকারীরা বাংলা বস্নকেড ও কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচি দেয়। ঘটে সহিংসতা ও সংঘাত। আসে নিহতের খবর। সর্বশেষ শুক্রবার দেশের জননিরাপত্তা রক্ষায় সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে গত মঙ্গলবার থেকেই রাজধানী ঢাকা সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে কাঁজাবাজারগুলোতেও। কমে যায় নিত্যপণ্য সরবরাহ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকলেও বাজারে ক্রেতাদের তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে পাড়া-মহলস্নার ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে পুরনো সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মহলস্নার গলিগুলোতে মুদি দোকান খুলতে দেখা গেছে। তবে এর সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। অনেক বিক্রেতাকে তিন দিন আগের পণ্যই বিক্রি করতে দেখা গেছে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে টমেটো। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। এ ছাড়াও প্রতিকেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার ওপর। গত সপ্তাহে সবচেয়ে কম দামে বিক্রিত পটলের কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকার ওপর। এর বাইরে শসা ১২০ টাকায়, কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে, বাজারে হঠাৎ বেগুনের দাম কেজিতে ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে। শনিবার বাজারে লম্বা বেগুন ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়। আর সবুজ গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার ওপর; কালো গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। সবজি বিক্রেতারা জানান, বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি করলা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়, কাঁকরোল ১০০, পেঁপে ৮০, ঢেঁড়স ৮০, পটল ৭০, চিচিঙ্গা ১০০, ধুন্দুল ৮০, ঝিঙা ১০০, বরবটি ১৪০, কচুর লতি ১২০, কচুরমুখী ১২০ টাকায় ও মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়াও বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে শাকের বাজারেও। এদিকে বাজারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা দরে। যদি এভাবে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়, তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। এ ছড়াও বাজারে এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৫০ টাকা করে। এ ছাড়াও আগের চড়া দামে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মোকামে প্রতি বস্তা চালে ২০০ টাকা বেড়েছে। সেভাবেই বিক্রি করছেন। এর আগে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। এখন মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০-৭৫, পাইজাম ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে কেজিতে ৪-৫ টাকা বেশি। অন্যদিকে গত সপ্তাহের দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের বাজার। এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০-২৩০ টাকা দরে; সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা; কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে আগের বাড়তি দামেই প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০০ টাকায়। এদিকে, সবজির পাশাপাশি বাজারের সব ধরনের মাছের দাম চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ২২০ টাকার ওপর। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, রুই প্রতি কেজি মাঝারি ৩৮০-৪০০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ৩৮০-৪০০ টাকা ও শিং প্রতি কেজি ৬০০ টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া টেংরা প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০ টাকার ওপর, কই প্রতি কেজি ২৭০ টাকার ওপর এবং বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বাজারে চিংড়ি, ইলিশ, রূপচাঁদা, শোল, কোরালসহ ছোট ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ নেই বললেই চলে।