যাত্রাবাড়ীতে দুই পুলিশকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩২

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ এলাকায় দুই পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে হত্যার পর বিদু্যতের খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ঝুলিয়ে রাখা পুলিশের মরদেহ উদ্ধার করতে গেলে আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে লাশ উদ্ধার করে।র্ যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সশস্ত্র টহলের মাঝে মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সংঘটিত এই খুনের ঘটনায় প্রশাসনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতদের মধ্যে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মুক্তাদির রহমান (৩৫) টু্যরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে এবং নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রো-রক্ষা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সূত্র বলছে, মুক্তাদির পরিবার নিয়ে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বসবাস করেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি বাসা থেকে মোটর সাইকেলযোগে টু্যরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তরের উদ্দেশে বের হন। কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগ এলাকায় আসার পর তিনি বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়েন। তার মোটর সাইকেলের সামনে পুলিশ লেখা ছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীরা তাকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার পাশের একটি নির্জন গলিতে নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তার লাশ রাস্তার পাশে বিদু্যতের খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিভিন্ন গলি থেকে বেরিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে পুলিশের সঙ্গে এমন সংঘর্ষ চলে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ঝুলিয়ে রাখা পুলিশ সদস্যের লাশ নামিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বেলা ১১টার দিকে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। নিহত পুলিশ সদস্যের বাংলাদেশ পুলিশের পরিচিতি নম্বর-৭৬৯৪০২৮৩৬৩। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টু্যরিস্ট পুলিশের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পুলিশ সুপার বদরুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে পুলিশ সদস্য মুক্তাদিরকে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হচ্ছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। টু্যরিস্ট পুলিশের প্রধান মীর রেজাউল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিহতদের লাশ দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়েছিলেন। এদিকে নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে দুপুর ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ও শনির আখড়ার মাঝামাঝি এলাকায় গিয়াস উদ্দিন (৩২) নামের আরেক পুলিশ সদস্য বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়েন। তাকেও জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে রাস্তার নিচে নির্জন জায়গায় নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মুক্তাদিরের মতোই গিয়াস উদ্দিনের লাশও খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে হত্যাকারীরা। কিন্তু পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযানের কারণে হত্যাকারীদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। পরে লাশ উদ্ধার করে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত গিয়াস উদ্দিন ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রো-রক্ষা বিভাগে নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাংলাদেশ পুলিশ পরিচিতি নম্বর-৬৬৮৫০১৩৪২৪। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। পুলিশ সদর দপ্তরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছানও এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল মামুনের বরাত দিয়ে জানান তিনি।