প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বিএনপির এই শীর্ষ নেত্রীর অবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী সৃষ্টি হওয়া গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দলীয়প্রধানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানান, চেয়ারপারসন এখনো মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে সিসিইউ সংবলিত সুবিধায় কেবিনে চিকিৎসাধীন। প্রায় সময়ই তার প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, আথরাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত ২২ জুন গভীর রাতে গুলশানের বাসায় 'হঠাৎ অসুস্থ' হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিনই তার হৃৎপিন্ডে পেসমেকার বসানো হয়। দুইদিন সিসিইউতে
থাকার পর সিসিইউ'র সব সুবিধা নিয়ে কেবিনে ছিলেন। এরপর গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা 'ফিরোজা'য় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ৫ দিন বাসায় থাকার পর গত ৮ জুলাই গভীর রাতে আবারও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে। এদিকে তার জীবন নিয়ে সংশয়ের কথা উলেস্নখ করে দলের পক্ষ থেকে বারবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিও জানানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি করলে বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা নেতিবাচক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কৌতূহলীরা নেত্রীর শারীরিক অবস্থা জানার জন্য বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগোযোগ করে। এরই প্রেক্ষাপটে শনিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুজবে কান না দিতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তার সুস্থতার জন্য দোয়া চান।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার কারাভোগ শুরু হয়। দীর্ঘ ২ বছর এক মাস ১৭ দিন বন্দি থাকা বিএনপিপ্রধানকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই, নিরীহগোছের আন্দোলন, কূটনীতিক পর্যায়সহ নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করে সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। পরে জিয়া পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পর থেকে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। অন্যদিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। মুক্ত হওয়ার পর থেকে তাকে বারবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।