কারফিউর মধ্যেও সহিংসতা, নিহত ৩১

সারাদেশে সেনাবাহিনীর টহল রবি-সোম দুই দিন সাধারণ ছুটি গুলিবিদ্ধসহ আহত দুই শতাধিক রণক্ষেত্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও রামপুরায় তুমুল সংঘর্ষ পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪

যাযাদি রিপোর্ট
কারফিউর মধ্যে সারাদেশে চলছে সেনাবাহিনীর টহল। ছবিটি রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনে শিক্ষার্থীরা থাকলেও এখন তাতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সরাসরি যুক্ত হয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক এ আন্দোলন এখন মোড় নিয়েছে 'রাজনৈতিক আন্দোলনে'। ফলে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে সেনাবাহিনী নামানোর পাশাপাশি সারাদেশে কারফিউ জারি করা হলেও নৈরাজ্য ও সহিংসতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এদিকে সারাদেশে রবি-সোমবার দুই দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের্ যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সশস্ত্র টহলের মধ্যেই শনিবার রাজধানীর রায়েরবাগে মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দুই পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকার শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ও কাজলাসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যের সন্তানসহ অন্তত ২০ জন নিহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ফুলপুরে ৪ জন, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ১ জন, নরসিংদীতে ৪ জন, গাজীপুরে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, ব্যাংকের এটিএম বুথ, সিটি করপোরেশন কার্যালয়, রাজনৈতিক অফিস, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ব্যক্তিগত যানবাহন ও গণপরিবহণও আক্রান্ত হয়। ফলে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চলমান কারফিউ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিথিল করা হলেও এ সময়ও ঢাকা মহানগরীসহ দেশের কোথাও যানবাহন চলাচল করেনি। জরুরি প্রয়োজনেও সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাননি। বিদু্যৎ, ওয়াসাসহ জরুরি সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত লোকজনকেও রাস্তায় দেখা যায়নি। বরং যেসব স্পটে আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে, ওইসব এলাকার বাসিন্দারা দিনভর ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও ভয়ার্ত সময় পার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যাদের লাশ রয়েছে তারা হলেন- পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন (৫৮) ও এএসআই মুক্তাদির (৪৮), ইমাম হাসান তাইম (১৯), মনোয়ার ইউসুফ (৩৫), জাহাঙ্গীর (৪০), হাবিব সর্দার (৪০), শেখ শাহরিয়ার (১৯), শুভ (১৬), সোহেল (৩৫), রাহাত, আব্দুল হান্নান, মায়া ইসলাম, রাজীব হোসেন, আব্দুলস্নাহ আল আজিজ ও অজ্ঞাত দুইজন। এদের মধ্যে ইমাম হোসেন তাইম যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। তার পিতা ময়নাল হোসেন ভূঁইয়া পুলিশের এএসআই। মনোয়ার ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, হাবিব শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হন। শেখ শাহারিয়ার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। অজ্ঞাতনামা নিহত দুই যুবককে বাড্ডা থেকে এবং একজনকে আজিমপুর থেকে আনা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রগুলো জানায়, শনিবার সকাল থেকে রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান লিংক রোড, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর-১০, মোহাম্মদপুর ও বসিলাসহ অর্ধশতাধিক স্পটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও রামপুরা-বাড্ডার বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত হন। স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা এলাকার বিভিন্ন গলিতে আগ থেকেই অবস্থান করছিল। আচমকা তারা গলি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠে আসে। ঠিক ওই সময়ই পুলিশ সদস্য মুক্তাদির ওই পথ দিয়ে মোটর সাইকেলে করে ইউনিফর্ম পরে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। তার মোটর সাইকেলের সামনে লেখা ছিল পুলিশ। এতে বিক্ষোভকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা ওই পুলিশ সদস্যকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার পাশের গলিতে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তার লাশ ঝুলিয়ে রাখে রাস্তার বৈদু্যতিক তারের সিমেন্টের খুঁটিতে। মূলত এরপর থেকেই পুরো এলাকায় তান্ডব ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, শুরু হয় সংঘর্ষ, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। যাত্রাবাড়ী চার রাস্তার মোড় থেকে শুরু করে শনির আখড়া হয়ে কাজলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। তারা যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মারমুখী হলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলাকারীরা যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কাজলা, ডেমরা চার রাস্তার মোড়, মাতুয়াইল ভাঙ্গা ব্রিজ ও কাঠের পুল এলাকায় রীতিমতো তান্ডব শুরু করে। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। এরপর শুরু হয় পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপ, টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণ। টিয়ার শেলের ঝাঁঝালো ধোয়ায় মানুষের চোখ মুখ জ্বলতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা কাগজ পুড়িয়ে, রুমাল ও গামছাসহ নানা ধরনের কাপড় ভিজিয়ে চোখ মুখের ঝাঁঝ নিবারণ করেন। এ সময় গুলিতে দুইজনের মৃতু্য হলে আন্দোলনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এমন ঘটনা চলমান থাকা অবস্থার মধ্যেই গিয়াস উদ্দিন নামের আরেক পুলিশ সদস্যকে ধরে নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। তাকেও নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। তার লাশ খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেও পুলিশের কারণে পারেনি। এ সময় পুলিশ আরও কড়া অভিযান শুরু করে। চালাতে থাকে মুহুর্মুহু গুলি। এতে আরও দুই আন্দোলনকারীর মৃতু্য হয়। তবে যারা গুলিতে মারা গেছেন, তারা পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন, নাকি অন্য কোনো পক্ষের গুলিতে মারা গেছেন, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংঘর্ষের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকার সব পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, সিএনজি ও এলপিজি পাম্প বন্ধ ছিল। আন্দোলনকারীরা পাম্পগুলোতেও ভয়াবহ হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে পাম্প মালিকদের লোকজন পাহারা দেওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম অবস্থান নেওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এদিকে শনিবার রাতেও যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এবং রামপুরা, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা ও বনশ্রীসহ আশপাশের এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। এমন হামলার কারণে অনেকটা বিপাকে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদ থেকেও ইটপাটকেল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে কোথা থেকে হামলা চালানো হচ্ছে তা বোঝা না যাওয়ায় তাদের পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে শনিবার সকাল থেকে রামপুরা সড়কে মোটর সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, বিজিবির টহল গাড়ি ছাড়া কোনো গণপরিবহণ দেখা যায়নি। পুলিশের পাহারা ছিল মোড়ে মোড়ে। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঠান্ডা মেজাজে অবস্থান করে। তবে কিছুক্ষণ পরপর বিজিবির গাড়ি বিভিন্ন সড়কে সাউন্ড গ্রেনেট ও ফাঁকা গুলি মেরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সতর্ক করছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় এসব গাড়ি উল্টো পথে চলাচল করতে দেখা যায়। শনিবার সরেজমিন রামপুরা বনশ্রী মেইন রোড, রামপুরা ব্রিজ, টিভি গেট, রামপুরা কাঁচা বাজার, আবুল হোটেল, মহানগর আবাসিক এলাকা, মধুবাগ, রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মালিবাগ রেল ক্রসিং এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীও সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিবাগ রেল ক্রসিং থেকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় দুপুর ২টা পর্যন্ত থমথমে পরিবেশ থাকলেও সংঘর্ষ, গোলাগুলির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে দুপুর ২টার পরে মালিবাগ রেল ক্রসিং এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। আগতদের মধ্যে ৪ জন রামপুরা বেটার লাইফ হসপিটালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা আশপাশের অন্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এই সময় এ এলাকায় মৃতু্যও খবর পাওয়া যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, মালিবাগ থেকে বাড্ডা রোডের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাড়াও উৎসুক জনতা অবস্থান করতে দেখা যায়। বিজিবির টহল গাড়ি চলে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা মালিবাগ ও রামপুরা ব্রিজের বিভিন্ন এলাকায় রোড ডিভাইডার উপরে ফেলতে দেখা যায়। এমনকি রোড ডিভাইডারের বিভিন্ন ছোট বড় গাছ ভেঙে ফেলছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট পরিসরে আগুনও দেয় তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই মেইন রোড দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা সঠিক কারণ বলতে পাচ্ছে না তাদের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে দেশে সেনা বাহিনী নামায় তারা বেশ খুশি। তারা আরও জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সড়কে থাকলে সবার মনে একটা ভয় কাজ করে। এ বাহিনীর কথা শুনে পরিবেশ অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। সারাদেশে কারফিউ চলছে। তবে সাধারণ জনগণ কারফিউ কী সেটা বুঝে না। তবে আন্দোলনকারীরা বিকালে নামবে বলে জানায় তারা। পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাতে থেকেই অবস্থান নিয়েছেন। সেনাবাহিনী রামপুরার বিটিভি সেন্টারে অবস্থান নিয়েছেন। এ এলাকায় অশান্ত পরিবেশ জনজীবনে স্বস্তি আনতে তারা কাজ করছেন। রামপুরা বনশ্রী মেইন রোড এলাকায় ফরাজী হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে আহত অবস্থায় দেড় থেকে ২০০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার এ হাসপাতালে চিকিৎসকরা ৮ জনকে মৃতু্য ঘোষণা করেন। আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সিরিয়াস রোগীদের ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। শনিবার এ হাসপাতালে দুপুর পর্যন্ত রোগী আসেনি। এ এলাকায় দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষ হয়েছে বলে কারও কাছে শুনানি। রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায় বেটার লাইফ হসপিটালের দারিত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, শনিবার রামপুরা এলাকায় কোনো সংঘর্ষ হয়নি। কোনো গোলাগুলি হয়নি। আমাদের এখানে দুপুর ২টা আগে আহত কেউ আসেনি। ২টার পরে মালিবাগ রেল ক্রসিং এলাকা থেকে চারজন জখম ব্যক্তি সেখানে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা মোড়, কাজলা দুই রাস্তার উভয় দিকের ঢালের সরু গলির রাস্তা, চার রাস্তার মোড়ের পেট্রোল পাম্পের সামনে, মাতুয়াইল কাঠের পুল, সানারপাড় চৌরাস্তা মোড়, ডেমরা চৌরাস্তা মোড়, ডেমরা আব্দুল করিম জুটমিলের সামনের কাঁচাবাজার, সুলতানা কামাল ব্রিজ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার, উত্তরা আব্দুলস্নাহপুর চৌরাস্তা মোড়ে, টঙ্গী ব্রিজের ওপর, মোহাম্মদপুর আলস্নাহ করিম মসজিদ সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়, বছিলা সেতু, বছিলা তিনশ' ফুট রাস্তার চার রাস্তার মোড়, বছিলা ব্রিজের নিচে, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মেরাদিয়া কাঁচাবাজার এলাকায় দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে বাড্ডা ও বছিলা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে গতকাল ঢাকার অধিকাংশ রাস্তা ছিল পুলিশশূন্য। কারণ, যেখানেই পুলিশের টহল ছিল, সেখানেই আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করেছে। মূলত পুলিশ দেখলেই আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। যে কারণে যেখানে পুলিশ দেখা গেছে, সেসব এলাকায় বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক জায়গা থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ স্বেচ্ছায়ও সরে গেছে বলে ডিএমপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্বশস্ত্র সেনাবাহিনীর সদস্যরা অনেক জায়গা থেকে পুলিশকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যে কারণে ঢাকার যেসব এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল, সেসব এলাকায় পুলিশের কোনো সদস্য দেখা যায়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই গাবতলী, আমিনবাজার ব্রিজ এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। দায়িত্ব পালনকালে সেনাসদস্যরা পথিকদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে পরিচয় জানতে চেয়েছেন। কি উদ্দেশে, কোথায় যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন পথচারীদের কাছে। এ ছাড়া প্রতিটি গলির মুখে সেনাসদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, শ্যামলী ফুটওভার ব্রিজের নিচে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে মূল রাস্তার ওপর একসারিতে তিনটি জায়গায় চেক করা হচ্ছে। মূলত গন্তব্যের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষদের সময়ের দিকটি বিবেচনা করে অত্যন্ত দ্রম্নততার সঙ্গে চেক করা হচ্ছে যানবাহন ও মানুষজনদের। এরপর দ্রম্নততার সঙ্গে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার সময় লোকজনদের কোন কোন রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে, সে সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন সেনাসদস্যরা। আগারগাঁও শিশু মেলার সামনের তিন রাস্তায় মোড়ে সেনাসদস্যদের সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মাত্র কয়েকশ' গজ আগে যানবাহনে সেনাবাহিনী কর্তৃক চেক করার কারণে নতুন করে কোনো মানুষকে আর চেক করা হচ্ছে না। এরপরও যেসব যানবাহন অন্য রাস্তা দিয়ে সেই রাস্তায় যাচ্ছে, শুধুমাত্র সেসব যানবাহন চেক করা হচ্ছে। খানিকটা সামনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাঝ বরাবর রাস্তায় সেনাবাহিনীকে সর্তক অবস্থায় দেখা গেছে। রাস্তাটির সামনের দিকে গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে আরেকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাস্তাটি লাগোয়া গণভবন হওয়ায় সেখান দিয়ে সব ধরনের মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেসব এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে কেই গেলেই সেনাসদস্যরা আগাম সালাম দিয়ে পথচারীর পরিচয় জানতে চেয়েছেন। সালাম বিনিময় শেষে আগত ব্যক্তির পরিচয় জানা এবং পথচারীকে কোন রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে যেতে হবে, তা জানিয়ে দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিক দিয়ে ঢুকে সামনের গেট দিয়ে বের হওয়া যাবে না বলেও তারা জানিয়েছেন। কারণ, আগারগাঁও পরিকল্পনা কমিশন লাগোয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মূল গেটের সামনে সেনাসদস্যদের সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল লাগোয়া সরকারি মোহাম্মদপুর কলেজ ও উর্দুভাষী অবাঙালিদের ক্যাম্প সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে পুরোপুরি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, মাত্র কয়েকশ' গজ সামনেই গণভবনের অবস্থান। সেখানেও প্রচুর সেনাসদস্যকে সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে প্রচুর সেনাসদস্যকে অত্যন্ত বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় রাজস্ব ভবন, পাসপোর্ট অফিসের সামনে ও আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় কোনো চেকপোস্ট বসায়নি সেনাসদস্যরা। আগারগাঁও চৌরাস্তা মোড়ে সেনাসদস্যদের সর্তক অবস্থায় দেখা গেছে। চৌরাস্তা থেকে ফার্মগেট ও বিজয় সরণির দিকে যাওয়ার রাস্তায় চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তবে সাংবাদিক, সংবাদপত্র, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র দেখার পর তাদের যেতে দিয়েছেন সেনাসদস্যরা। সেনাসদস্যদের এ সময় গন্তব্যের দিকে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বিনয়ের সঙ্গে সেনাসদস্যরা মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, বিজয় সরণি চৌরাস্তা মোড়েও সেনাসদস্যরা বাড়তি সর্তকর্তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। যানবাহন তলস্নাশির পাশাপাশি যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন। এসব এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্সগুলো ছিল তালা দেওয়া। এলাকাগুলোতে কোনো সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। তবে বিজয় সরণি মোড়ে একটি পুলিশের পিকআপ দেখা গেছে। যদিও পিকআপে চালক ব্যতীত কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস্‌) বিপস্নব কুমার সরকার জানান, মূল রাস্তায় তেমন কোনো ঝামেলা না থাকার কারণে পুলিশের উপস্থিতি ছিল কম। এমনকি প্রয়োজনও ছিল না। যে কারণে ওইসব জায়গায় পুলিশ ছিল না। তবে যেসব জায়গায় সংঘর্ষ বা মিছিল ও আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে, সেসব এলাকায় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে। তিনি আরও জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, বছিলা, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় আন্দোলন সংগ্রাম, মিছিল সমাবেশ হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে। মূলত সেখানে সংঘর্ষ সেখানেই পুলিশ কাজ করছে। যেখানে সংঘর্ষ নেই, সেখানে শুধু শুধু পুলিশের উপস্থিতি থাকা অপ্রয়োজনীয়। এ জন্য ওইসব জায়গায় পুলিশ নেই বা রাখার প্রয়োজন হয়নি। যারা ছিল, তাদের সরিয়ে প্রয়োজনীয় জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, চলমান সংঘর্ষে নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে দেশের দুই ডজন জেলার অন্তত একশ' পয়েন্টে দফায় দফায় সংঘর্ষ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।র্ যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সশস্ত্র টহল উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা বিগত কয়েকদিনের মতো শনিবারও রাজপথ দাপিয়ে বেরিয়েছে। যায়যায়দিনের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শনিবার সকাল থেকে দিনভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা এ সময় বিপুলসংখ্যক স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়লে নূরে আলম ও রায়হান নামের দুই তরুণ নিহত হন। আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত নূরে আলম (২১) কুড়িগ্রামের আমীর হোসেনের সন্তান। পেশায় রাজমিস্ত্রি নূরে আলম গাজীপুরে তেলিপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। নিহত রায়হান নওগাঁর মামুনুর রশিদের ছেলে। তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। তিনি টঙ্গীর বোর্ড বাজার এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারীরা টঙ্গীর বিদু্যৎ অফিস, বেক্সিমকো কারখানা, সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা টঙ্গী কলেজের অডিটরিয়াম ও গার্ডরুম ভাঙচুর করে। টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, হামলাকারীরা শুধু ভাঙচুর করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা অগ্নিসংযোগও করেছে। এ ছাড়া গাজীপুরের গাছা থানা ও আইউটি আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহের বিআরটি প্রকল্পের রোড ডিভাইডার, স্থানীয় বেশকিছু গার্মেন্ট ও দোকানপাট আক্রান্ত হয়। আমাদের জাবি প্রতিনিধি জানান, কারফিউ ভঙ্গ করে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩টায় এক ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় 'প্রহসনের কারফিউ মানি না, মানবো না, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই' ইত্যাদি স্স্নোগান দিতে থাকেন তারা। এর আগে সারাদেশে নিহত আন্দোলনকারীদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ৩০ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেন তারা। বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌর শহরের পুলিশ ফাঁড়ির গেট ভাঙচুর করে তালা লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাজিতপুর সার্কেল এসপি সত্যজিৎ কুমার ঘোষ। এদিন বাজিতপুর শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকে। মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মাধবদীর মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, পাঁচদোনা মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স ও কৃষি অফিসে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ময়মনসিংহ বু্যরো ও গৌরিপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের গৌরিপুর কলতাপাড়ায় আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে তিনজন ছাত্র নিহত হন এবং থানার ওসি সুমন রায়সহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি ও চালস্নু স্পিনিং মিল তুলার গুদামে আগুন দেওয়া হয়। নিহতরা হলেন- উপজেলার দামগাঁও গ্রামের রাকিব, চৌড়ালী গ্রামের বিপস্নব ও কাওরাদ গ্রামের জুবায়ের। এরপর সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহল দেয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ফুলপুরে পুলিশ, বিজিবি ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক নিহত হয়। জানা যায়, কৃষক সাইফুল ইসলাম ধান বিক্রির জন্য ফুলপুরে আসে। এ সময় পুলিশ, বিজিবি ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। আন্দোলনকারীদের হামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড মো. মামুন সরকার মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হন। পরে তাকে চিকিৎসার স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের পাল্টা হামলা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ফলে প্রায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়। আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের খবর পেয়ের্ যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে অ্যাকশনে গেলে হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ ছাড়া আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় দিনব্যাপী বিভিন্ন থানায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে চেষ্টা করলে প্রায় শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। উলেস্নখ্য, খুলনায় চার পস্নাটুন বিজিবি ও ১৫০ জন সেনাবাহিনী এবং সাত থানার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, মাদারীপুরে তিন পস্নাটুন সেনাবাহিনী ও ছয় পস্নাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে মাদারীপুর শহর। কোথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জনমানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। শুক্রবার পুলিশের গুলিতে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নরসংদী প্রতিনিধি জানান, জেলার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়। এদিকে নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে তৈয়ব নামে এক কয়েদি তার প্রতিপক্ষ ইয়াসিন নামে এক যুবকে গুলি করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই গুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ আইসিইউ'তে মুমুর্ষূ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে ৮২৬ জন কয়েদির প্রায় সবাই পালিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে তৈয়ব একজন। তার বাড়ি জেলার রায়পুর উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের কলাপাড়া গ্রামে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, সে অত্র এলাকার চিহ্নিত অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ী। মাস-দুয়েক আগে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। জানা গেছে, শুক্রবার সে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী বালুয়াকান্দী গ্রামের প্রতিপক্ষ ইয়াসিন নামক ওই যুবককে গুলি করে। ইয়াসিন তার বন্ধু ছিল। তবে মাদক ব্যবসা নিয়ে বর্তমানে দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদিকে কারাগার থেকে সব পেশাদার সব অপরাধী পালানোতে পুরো জেলাজুড়েই সাধারণ মানুষদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী জোলা কারাগার পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, অস্ত্রাগার লুট হয়েছে। অস্ত্রাগারে রাখা প্রায় আট হাজার গোলাবারুদ এবং ৮৫টি রাইফেল লুট হয়েছে। শিবপুরে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ নিহত ৪ : ঢাকা সিলেট মহাসড়কে শিবপুর থানাধীন ইটাখোলা পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে সিয়াম (১৯), সুজন (১৭), আমজাদ (২২) এবং হৃদয় মীর (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। নিহত চারজনই ছাত্র। তাদের মধ্যে একজন ডিগ্রির ছাত্র, বাকি তিন জন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। নিহত আমজাদের বাড়ি পলাশ উপজেলার গজারীয়া ইউনিয়নে। বাকিদের বাড়ি শিবপুরের শাসপুর, সৈয়দনগর এবং সাদারচর গ্রামে। পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও শুক্রবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস এবং বর্তমান সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোলস্নার রাজনৈতিক অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া শনিবার সকালে সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।