রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দি পাঠানো হচ্ছে কাশিমপুরে

আদালত চত্বরে স্বজনদের ভিড়

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শুক্রবার ঢাকার সিএমএম আদালতে এক স্বজনের আহাজারি -যাযাদি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আটকদের শুক্রবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আদালত চত্ব্ব্বরে ভিড় করেন তাদের স্বজন। তারা আটক ব্যক্তিদের নির্দোষ দাবি করে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারের অভিযোগ তোলেন।

এদিকে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির চাপ বেড়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। ফলে চাপ সামাল দিতে বন্দিদের পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।

শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ব্বরে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া স্বজনরা ভিড় করেন। কারও মা-বাবা, কারও ভাই, কারও বোন কিংবা অন্য আত্মীয়রা অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।

বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হন রাজধানীর সাইনবোর্ডের বাসিন্দা তুষার। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। শুক্রবার দুপুরে তার মা মমতাজ বেগম ছেলেকে দেখার জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চত্বরে আসেন। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে তুষারের বয়স ২১ কিংবা ২২ হবে। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। তাকে রাত ৩টায় ডেমরা থানার পুলিশ এসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি জানি না আমার ছেলে কি করেছে। গত কয়েকদিনের আন্দোলনেও সে যায়নি।'

তিনি জানান, আদালতে ছেলের জন্য এসেছেন। তুষার গাড়ি থেকে আমাকে দেখেই 'মা মা' বলে চিৎকার করছিল।

রাজধানীর কাজলা সামাদ নগরের বাসিন্দা মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে তুলে নেয়। মনির হোসেনের স্ত্রী ছালমা বলেন, 'গতকাল আমার স্বামী দোকান বন্ধ করে বাসায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে বাসায় ঢুকে যায়। এরপর কিছু না বলেই হ্যান্ডকাফ পরাতে গেলে আমি জিজ্ঞেস করি, কেন আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করবেন? কী অপরাধ? এরপর হ্যান্ডকাফ দিয়ে আমার হাতে পুলিশ আঘাত করে। এ সময় আমার ছোট্ট ছেলে এসে বাধা দিলে তাকে টেনে সরিয়ে দিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় তারা আমাদের বাসার নিচের সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।'

এ সময় সঙ্গে থাকা আটক মনির হোসেনের মা জানান, ছেলেকে দেখতে এসেছি। এই আন্দোলনে সে কখনো রাস্তায় বের হয়নি। এক সময় বিএনপি সমর্থন করত। এখন সে কোনো দল করে না।

শুধু মনির কিংবা তুষারের স্বজন নন, শুক্রবার আদালত চত্ব্বরে আসা স্বজনরা আটকদের নির্দোষ দাবি করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় তারা বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারেরও অভিযোগ করেন।

গ্রেপ্তার হওয়া 'দ্যা মিরর এশিয়া নিউজের' সাংবাদিক সাঈদ খানের স্ত্রী সানজিদা ইতি বলেন, 'আমার স্বামীকে নিউজ করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেট্রোরেলে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক নিউজতো করবেই। আমার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছে। এছাড়াও আন্দোলনে তার পায়ে ইট পড়ায় কয়েকদিন ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি। আমি কখনো আদালতে আসিনি। আমার অসুস্থ ছেলেটা বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে অস্থির। আপনারা পিস্নজ আমার ছেলের জন্য তার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।'

তথ্য অনুযায়ী, কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গত চার দিনে ২ হাজার ২৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বন্দিদের

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নজিরবিহীন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর নৈরাজ্যে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে রাজধানীতে চলছে পুলিশের চিরুনি অভিযান। এতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের চাপ বেড়েছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শুধু ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয় শতাধিক। সারাদেশে এই সংখ্যা কয়েক হাজার। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৩০টিরও বেশি। যার প্রভাব পড়েছে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকায় হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। চাপ সামাল দিতে অনেক বন্দিকে গাজীপুরে অবস্থিত কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বর্তমানে সেখানে আছেন ১০ হাজারের বেশি বন্দি। গত এক সপ্তাহে কারাগারে এসেছেন ৩ হাজার ৮২৯ জন বন্দি। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার আসামি।

জানা গেছে, অতিরিক্ত বন্দিদের চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। প্রতিদিন নতুন করে কয়েকশ' বন্দিকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিকে যেমন কারা কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে তেমনি নানা সমস্যা পড়ছেন বন্দিরাও। প্রতিটি ওয়ার্ডে বন্দিদের চাপ বেশি থাকায় খাওয়া, ঘুম ও চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, 'ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন, বর্তমানে যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। সম্প্র্রতি কারাগারে ৩ হাজার বন্দি প্রবেশ করেছে। আমরা কিছু বন্দিকে কাশিমপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তালিকা করে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে