রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
২০২৩-২৪ অর্থবছর

বছর শেষে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বছর শেষে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি

সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে নতুন অর্থবছরে বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ১২.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘাটতি হয়।

বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। ওই অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে যেখানে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, বিগত অর্থবছরে সব মিলিয়ে তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়। এর মধ্যে এনবিআর আমদানি পর্যায় থেকে এক লাখ ৩৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ভ্যাটে এক লাখ ৪০ হাজার ৪৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং আয়কর থেকে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৫.৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, ভ্যাটে ১১.৯৭ শতাংশ এবং

আমদানি পর্যায়ে ৮.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ৯.৭ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, আর অন্যান্য উৎস হতে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরেও এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে।

এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর থেকে আসবে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি, সম্পূরক শুল্ক ৬৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, ৪৯ হাজার ৪৬৪ কোটি, রপ্তানি শুল্ক ৭০ কোটি, ৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল। সে কারণে বড় একটা নেতিবাচক প্রভাব ছিল পুরো বছরজুড়ে। তারপরও সামগ্রিক রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।

তবে চলতি অর্থবছর বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন- এক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারবে না। স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া নগদ অর্থসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করার বিধান রয়েছে।

ফলে দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ থেকে কর আদায় বাড়তে পারে। পাশাপাশি সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে এলসি খোলা কিছুটা সহজলভ্য করেছে। মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে গাড়ি, ফলমূল, ফুল ও প্রসাধনীর মতো বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্রের বিপরীতে নগদ অর্থ জমা দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে। এর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানিতে অগ্রিম অর্থ জমার বিষয়টি শিথিল করা হবে। ফলে আমদানিও কিছুটা বাড়তে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে