রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সারাদেশে ৯ দিনে গ্রেপ্তার প্রায় পাঁচ হাজার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সারাদেশে ৯ দিনে গ্রেপ্তার প্রায় পাঁচ হাজার

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার। বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্রে গ্রেপ্তারের এ তথ্য জানা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অনেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। কোথাও কোথাও পুরনো মামলায়ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ১২৮ মামলায় ৪৫১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক খুদে বার্তায়র্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব) জানায়, সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে গত ৫ দিনে ২২৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা

সংস্কারের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারাদেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, গত রোববার রাত থেকে ঢাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র?্যাব। এসব অভিযানে রাজধানীতে এখন ২১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে অভিযান অব্যাহত আছে। নাশকতার মামলায় সারাদেশে হামলা, ভাঙচুর, নাশকতা, অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

ঢাকায় ২০০ মামলায় ২১০০ গ্রেপ্তার

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপস্নব কুমার সরকার বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, 'এখন পর্যন্ত ২০০টি মামলায় ২১০০ জনের বেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কিছু মামলা দায়ের হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষে বিটিভি ভবনে হামলায় জড়িত ছিল, সেতু ভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত ছিল, গ্রেপ্তার দুই হাজার ১০০ জনের মধ্যে প্রত্যেকের কন্ট্রিবিউশন ছিল।'

তিনি বলেন, 'দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার প্রধানমন্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, এই সন্ত্রাসী চক্র বেছে বেছে সেগুলোতে হামলা করেছে। উন্নয়নের যাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য যেখান থেকে উন্নয়নের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা হচ্ছে, সেগুলোকে বেছে বেছে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। সব নথিপত্র তারা পুড়িয়ে দিয়েছে।'

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, 'এসব জামায়াত ও বিএনপি চক্রকে ধরার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ডিএমপি তাই করবে। সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার জন্য ডিএমপি কাজ করছে। আমরা আরও পরিকল্পনা করছি যেন এই ধরনের সন্ত্রাসীরা ঢাকা না ছাড়তে পারে। ঢাকার ভেতরে যারাই থাকুক না কেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।'

র?্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ২২৮

এদিকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নাশকতার অভিযোগে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব)।

বৃহস্পতিবার র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, 'সাম্প্রতিক নাশকতার অভিযোগে ঢাকায় ৫৫ জনসহ সারাদেশে ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র?্যাব।'

চট্টগ্রামে ২৮ মামলায় গ্রেপ্তার ৭৩৫

অন্যদিকে, আমাদের চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রামে আরও ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫ জন এবং জেলা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৪ জন। চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নাশকতার অভিযোগে ২৮টি মামলায় মোট ৭৩৫ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, 'আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নগরীর হালিশহর থানায় নতুন করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩৭ জনের নাম উলেস্নখ করে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এ মামলাটি বুধবার রাতে করা হয়েছে। এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে সব মিলিয়ে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, '১৭টি মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ জনকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, দাঙ্গা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ১৭ মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মোট ৪০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।'

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আবু তৈয়ব বলেন, 'সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলায় এপর্যন্ত এসব মামলায় মোট ৩২৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।'

রাজশাহীতে ১৭ মামলায় গ্রেপ্তার ২৮২

রাজশাহীতে কোটা আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগ ১৭টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সাতটি মামলা করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। বাকি ১০টি করেছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। এসব মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, মহানগর এলাকায় গত কয়েক দিনে সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগ সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাত ৯০০ জনকে আসামি করা হয়। গত কয়েক দিনের অভিযানে ১৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, 'রাজশাহী জেলায় দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫০ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল পর্যন্ত মোট ১১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

পুলিশ সুপার আরও বলেন, 'যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই নাশকতার চেষ্টা করেছেন। এদের রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ মামলায় গ্রেপ্তার-৪১

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা আন্দোলনের নামে নাশকতার চার মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দাঙ্গা ও নাশকতার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি, আশুগঞ্জ থানায় দুটি ও সরাইল থানায় একটি মামলা হয়। এসব মামলায় পুলিশ সোমবার ২৫ জন, মঙ্গলবার সাতজন, বুধবার চারজন ও বৃহস্পতিবার সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বর্তমানে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।'

নীলফামারীতে ৫৯ জন আটক

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, কোটা আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে গত ৭ দিনে ৫৯ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে একটি পিস্তল গত এক সপ্তাহেও উদ্ধার হয়নি।

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম জানান, কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনেক দুর্বৃত্ত এতে ঢুকে পড়ে। তারাই মূলত পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। এর মধ্যে দুটি রাইফেল আমরা উদ্ধার করেছি। একটি পিস্তল এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সুপার মো. মোকবুল হোসেন বলেন, 'জেলার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা গভীরভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। সেনাবাহিনী,র্ যাব ও পুলিশ টহলে রয়েছে।'

দিনাজপুরে ৬ মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় দিনাজপুরে ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫০ জনের নাম উলেস্নখ এবং অজ্ঞাত তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৭ জন।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ হোসেন জানিয়েছেন, এসব মামলার মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে দুটি এবং জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও অন্য দুই আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে চারটি মামলা করেন।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি, বিরল উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রশিদ কালু, কাহারোল উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ চৌধুরী এবং জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর শাহিন সুলতানা বিউটি বয়েছেন। গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জামালপুরে ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ২৮

কোটা আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় জামালপুরে ১০ মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. সোহেল মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'সদরে চারটি এবং ছয়টি থানায় একটি করে পৃথক মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

পঞ্চগড়ে ৩ মামলায় গ্রেপ্তার ২৯

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এসব মামলায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত নতুন করে আরও তিনজনসহ মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৯ জন। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় সদর থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে