বিদায় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শাফিন আহমেদ
জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ মারা গেছেন (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তার মৃতু্য হয়েছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। শাফিন আহমেদ স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন। শাফিন আহমেদের ভাই হামিন আহমেদ তার মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাফিন আহমেদের ভাই হামিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কয়েকজন নিকটাত্মীয় আছেন। তারা আপাতত শাফিনের কাছে আছেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে গিয়ে দ্রম্নত ভাইয়ের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবেন। এদিকে, দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ওড়াল দেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। কত পরিকল্পনা, দেশটির এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন। শুরুটা \হহয়েছিলও তেমন সুন্দর। দ্বিতীয় কনসার্টের আগে যেন খেলেন ধাক্কা। যে ধাক্কা তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ নিমেষেই পাল্টে দেয়। সামলে উঠতে পারেননি আর। বরণ করে নিতে হয় মৃতু্যকে। বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে উড়ে আসা শাফিনের হঠাৎ মৃতু্যর খবর হতবাক করে দেয়। এই মৃতু্য সংবাদ যেন বিনোদন অঙ্গনের সবার পাশাপাশি গানপ্রেমীদের কাছেও একেবারেই অকল্পনীয়। তাইতো প্রথম শোনায় কেউ বিশ্বাসও করতে পারছিলেন না। কিন্তু সেটাই সত্যি, সবাইকে অবাক করে দিয়ে চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে ব্যান্ড সংগীতের উজ্জ্বল এই তারকাকে। জানা গেছে, ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শাফিন আহমেদ। একটি কনসার্টে গানও পরিবেশন করেন। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়াতে তার আরেকটি স্টেজ শোতে পারফর্ম করার কথা ছিল। সেদিন অনুষ্ঠানের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কি হয়েছিল শাফিন আহমেদের, জানতে চাইলে তারই বড় ভাই হামিন আহমেদ জানান, ম্যাসিভ (গুরুতর) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল শাফিন আহমেদের। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় গান গাওয়ার কথা ছিল শাফিন আহমেদের। সব ঠিকঠাক চলছিল। হোটেলে আয়োজকরাসহ বসা ছিলেন। এর মধ্যে শাফিন জানান, তার শরীরটা খারাপ লাগছে। তাই স্টেজ শো বাতিল করতে হয়। হামিন বললেন, 'অনুষ্ঠানের দিনই শাফিনের খারাপ লাগা শুরু করে। একটা পর্যায়ে খারাপ লাগা বাড়তেই থাকে। মাত্রাতিরিক্ত অস্বস্তিবোধও হচ্ছিল। খারাপ লাগাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে শাফিন সবার সামনে পড়ে যায়। হোটেল রুমে থাকা আয়োজকরা ঘাবড়ে যান। দ্রম্নত হাসপাতালে নেওয়া হয়, কেন এমনটা হয়েছে, তা জানার চেষ্টাও করা হয়।' তিনি আরও বলেন, 'সন্ধ্যায় যখন অসুস্থ হয়, তখন তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে নেওয়ার পর কিছুটা ভালো অনুভব করেন। তখন যারা আয়োজক ছিলেন, তারা হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আবার অ্যাটাক হয়, সেটা ম্যাসিভ ছিল। ৫-৭ মিনিট একেবারে অচেতন ছিলেন। এরপর সিপিআর করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। সিপিআর শেষে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।' এই কদিন ভেন্টিলেশন শেষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকালে তার মৃতু্যর খবরটা জানানো হয়। হামিন আহমেদ জানান, ১৫ বছর আগে থেকে শাফিন আহমেদ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমবার তিনি ভারতে হার্ট অ্যাটাক করেন। হামিন জানান, ভারতের ওই হার্ট অ্যাটাকও মেজর ছিল। এরপর সেটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে আরেকবার হার্ট অ্যাটাক হয় শাফিনের। জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জেও শাফিন আহমেদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাকে মানসিক চাপ নেওয়া, এমনকি বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। এরপর বড় ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ডসংগীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মাইলস, যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনো। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন। তবে গত কয়েক বছর তিনি মাইলস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়ে তোলেন। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে 'আজ জন্মদিন তোমার' 'চাঁদ তারা সূর্য', 'জ্বালা জ্বালা অন্তরে', 'ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম', 'ফিরে এলে না', 'হ্যালো ঢাকা', 'জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন' প্রভৃতি। তিনি তার বাবা কমল দাশগুপ্তের কিছু গান নিয়েও একক অ্যালবাম করেছিলেন। মাঝখানে কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েও আলোচনার সৃষ্টি করেছেন।