বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
নিত্যপণ্যের বাজার

সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম

কোটাবিরোধী আন্দোলনের জেরে প্রায় ১০ দিন ধরে রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের পণ্য পরিবহণ কার্যত বন্ধ ছিল। পরে কারফিউ ঘোষণা করলে পণ্য পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গত দু'দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পণ্য সরবরাহ অন্তত ৪ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম কমেনি।

এদিনও রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হয়েছে আগের চড়া মূল্যে। বিশেষ করে কাঁচাবাজারে ক্রেতা অস্বস্তি এখনো চরমে। সব ধরনের সবজি ও মাছের দামে স্বাভাবিকের থেকে বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে ক্রেতাকে। অন্যদিকে মুরগির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও প্রতি ডজন ডিম কিনতে হয়েছে ১৬৫ টাকা দরে। পাড়া-মহলস্নার দোকানে যা বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে বুধবার রাতে সবজিবাহী বিপুলসংখ্যক ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ পণ্য ঢাকার বাজারে এসেছে তার থেকেও বেশি পণ্য ঢুকেছে এদিন। পণ্যবাহী বেশ কয়েকজন ট্রাক চালকের কথা বলে জানা গেছে, পণ্য পরিবহণে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। বরং সব জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের সহায়তা করেছে। এমনকি যেসব স্থানে তাদের আগে চাঁদা দিতে হতো তা দিতে হয়নি। কিন্তু এর কোনো প্রভাব নেই রাজধানীর খুচরা বাজারে।

এদিনও সব ধরনের মাছের কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারের কিছু আসাধু আড়তদার মাছ সংরক্ষণ করে রাখছেন। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমেছে। এভাবেই ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি দাম

\হহাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেখা গেছে ১২টার পর রাজধানীর বাজারে কোনো মাছই পাওয়া যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাঝারি আকারের প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা দরে। কাতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৭০-৪২০ টাকা দরে। ছোট পাঙাস মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা যা স্বাভাবিক সময়ে ১৭০ টাকা বিক্রি হয়। একইভাবে ২০০-২২০ টাকা দরের পাঙাস বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকার উপরে। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, শিং প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া টেংরা প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, কই প্রতি কেজি ২৯০ টাকা ও বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, পাইকারিতে মাছ থাকলেও দাম অনেক বাড়তি তাই কম মাছ এনেছেন। ফলে বাজারে ২ ঘণ্টার মধ্যেই বেশিরভাগ বিক্রেতার মাছ শেষ হয়ে যায়। এদিকে কারফিউ কত দিন থাকে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে না পারায় বেশি দামেই ক্রেতারা মাছ কিনছেন।

একই অবস্থা সবজির বাজারে। এদিন বেশি দামে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে প্রতি কেজি বরবটি ১০০-১২০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, ধনেপাতা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, টমেটো ২৫০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, প্রতি লাউ ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৭০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, কালো লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, গোল বেগুন কালো ১৩০ টাকা এবং সবুজ গোল বেগুন ৯০-১০০ টাকা দরে।

এ ছাড়া বাজারে কলমি শাক ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কচুশাক ২০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা, পাটশাক ৩০ টাকা, ডাঁটা ৩০ টাকা, প্রতি আঁটি লাউশাক ৫০ টাকায় এবং পুঁইশাক প্রতি আঁটি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কারফিউর আগে থেকেই অবশ্য পেঁয়াজের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে মুদি দোকানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সব ধরনের ডালের দাম কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১৩৫ টাকার ছোট দেশি মসুরের ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। আর মোটা আমদানি করা মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। এর বাইরে বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা, মাষকলাই ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া প্যাকেট পোলাউ চাল ১৫৫ টাকা, মানভেদে খোলা পোলাউ চাল প্রতি কেজি ১১০- ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫-১৫৫ টাকা। খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা।

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির বাজার। এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা দরে, লেয়ার মুরগি ৩৪৫-৩৫০ টাকা, সোনালি ৩০০-৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে