প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার কোটা আন্দোলনের মধ্যে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন -ফোকাস বাংলা
সরকারের উন্নয়ন যারা ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, 'দেশবাসীর কষ্ট লাঘবে সরকার যে উন্নয়ন করছে, সেগুলো ধ্বংসকারীদের বিচার দেশবাসীকেই করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।'
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৮ জুলাই কোটা আন্দোলনকারীদের ডাকা 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচির মধ্যে মেট্রোর লাইনের নিচে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুট ওভারব্রিজে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই একটি ট্রেন ছুটে যায়। পরে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় একদল মানুষ। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে, সেটা সুনিশ্চিত করা হবে। দেশটা যাতে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে সেই চেষ্টাই করব। এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে দেশ, সেটা ব্যর্থ হতে পারে না। যে স্থাপনাগুলো মানুষের জীবনকে সহজ করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোন ধরনের মানসিকতা! ঢাকা শহর যানজটে নাকাল, মেট্রো সেখানে স্বস্তি দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই পরিবহণ এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না।'
তিনি বলেন, 'এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রো রেলের ওপর কেন এত আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর স্টেশনগুলো যে
\হআমরা তৈরি করেছি- এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় একটি আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর একটা মেট্রো রেল আমরা করেছিলাম।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ধ্বংসের চিহ্ন দেখলাম। এটা বিশ্বাস হতে চায় না, যে এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু, সেই কাজই করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করলো আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো। সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার কিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সকলের বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।'
তিনি বলেন, 'আমি কোটা আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যে কোনো নাগরিককেই তো আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এই সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে যেভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।'
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, '৭৫ এর পর ২৯টি বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে খাদ্য নিরাপত্তা, বিদু্যৎ, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়বো? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না, জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপরকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এত ক্ষোভ কেন?'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকান্ড হলো, আর কীভাবে করলো?'
শেখ হাসিনা বলেন, 'দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রম্নত সময়ে হয়। যাতে মানুষ আরও সুন্দরভাবে চলতে পারে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। এই আনন্দ যারা নষ্ট করলো, জনগণের নির্বিঘ্নে চলাচলের পথ যারা রুদ্ধ করলো তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি সেই বিচারের দিকে চেয়ে আছি। আমি এর নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছি না।'
