অনির্দিষ্টকালের জন্য মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ
রাজধানীতে সভা-সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ :ডিএমপি
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে আ'লীগ ও বিএনপির দলীয় কার্যালয়
প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:০৭
যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ব্যতীত পুরো ঢাকায় সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কোটা আন্দোলন ঘিরে ঢাকায় অরাজক পরিস্থিতি এড়াতেই এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার ও ডিএমপির মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান সহিংস আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এবং ঢাকাবাসীসহ জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়া ঢাকার সব জায়গায় সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এমন নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক
\হনিবন্ধিত সংগঠন, দল, জোট বা রাজনৈতিক দল রাজধানীতে যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা মিছিল করতে পারবেন। তবে এমন কর্মসূচি পালন করার আগে অবশ্যই ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণকারী একাধিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর লোকজনও মাঠে নেমে পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যানার নিয়ে নামছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যানার ব্যবহার করছে না। এটি দলগুলোর কৌশল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে অধিকাংশ সংগঠন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি মেনে নেওয়ার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি তারা সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা করেছে। অনেক সাধারণ মানুষ পথচারী এতে আহত হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি যানবাহন ও জিনিসপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এমনকি অনেক দুর্বৃত্ত অনেক সাধারণ আন্দোলনকারী ও মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ভবন, পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল পস্নাজাসহ অসংখ্য স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। তারপরও পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এত কিছুর পরও যদি দুর্বৃত্তরা আরও সহিংসতার ঘটনা ঘটায়, তাহলে পুলিশ জনগণের জানমাল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে বাধ্য হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সহিংসতার কারণে ঢাকার ধর্মীয় উপাসনালয়, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রতিটি স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা অনেক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বহুতল ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। আন্দোলনের স্পট হিসেবে সদ্য আলোচনায় আসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে।