আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সারাদেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত দলীয় নেতাকর্মীদের গায়েবানা জানাজা ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন আর তাদের হাতে নেই। সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী ব্যাপক সন্ত্রাসী তান্ডব চালাচ্ছে এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিপরীতে এখন বিএনপি-জামায়াত তাদের পুরনো আগুন-সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ আশ্রয়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ইতোমধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। এই আন্দোলন আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাশ বানিয়ে
রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'যারা সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে, পুলিশ এবং আ'লীগসহ দলের অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালাচ্ছে তারা একাত্তরের দেশবিরোধী অপশক্তি। এদের প্রতিহত করতে সরকার প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে।'
গায়েবানা জানাজা ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের নেতাকর্র্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণের ৮০% ও কোটায় ২০% প্রস্তাব করা হবে
এর আগে দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কারে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৮০ ভাগ ও কোটার জন্য ২০ ভাগ প্রস্তাব করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সে লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা নিরসনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, দ্রম্নততার সাথে এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদঘাটিত হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে। নতুন প্রজন্মের মস্তিষ্কে রাজাকারের মতো ভিন্ন শব্দ ঢুকিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেশবিরোধী রাজনীতির ধারা প্রচলনের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যারা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সন্ত্রাস-সহিংসতার মাধ্যমে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হবো। কারা উসকানি দিয়েছে, দিচ্ছে- সব খতিয়ে দেখা হবে। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পবিত্র দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তেছে। আমরা সেখানে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না- এ কথা বলতে পারি।'
তিনি এর আগে বুধবার বলেন, 'আজ যে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে, এ আন্দোলনেরও নেতৃত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান। তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটি অরাজনৈতিক ইসু্যকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করতে চক্রান্ত করছে বিএনপি। অপশক্তিকে এর পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকে বিকৃত করে উপস্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনের কাউকে উদ্দেশ্য করে রাজাকার শব্দ ব্যবহার করেননি।'
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।