বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
আবেদন খারিজ হাইকোর্টের

ড. ইউনূসের মামলা চলবে

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ড. ইউনূসের মামলা চলবে

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এক বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুলস্নাহ আল মামুন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আদেশের পর ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুলস্নাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। ড. ইউনূস আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সর্বোচ্চ আদালতের কাছে সব আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, 'অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. ইউনূস যে আবেদন করেছিলেন, সেটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কোনোরকম বিলম্ব ছাড়া মামলাটির বিচারকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, 'মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র থেকে দেখিয়েছি, আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। কাজেই আবেদনটি খারিজযোগ্য। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।'

এ মামলায় ১২ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার

বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন। ১৫ জুলাই ছিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ। হাইকোর্টে এ মামলার বিরুদ্ধে আবেদন বিচারাধীন উলেস্নখ করে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছাতে ড. ইউনূসের আইনজীবী সেদিন আবেদন করেন।

পরে বিচারিক আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে ৫ আগস্ট তারিখ দেন। এর আগে ৮ জুলাই এ আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ সাত আসামি।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছর ৩০ মে মামলা করে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় এক দিন আগেই। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট চুক্তি হয়। সেটেলমেন্ট চুক্তিতেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। 'ভুয়া' সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ৪৩৭ কোটি এক লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয়।

পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত এক কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই 'অসৎ উদ্দেশ্যে' ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামান, মাইনুল ইসলাম ও ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে তিন কোটি টাকা করে স্থানান্তর করা হয়।

একইভাবে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে চার কোটি টাকা ও দ্য সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে পাঁচ কোটি টাকা এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ছয় কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।

দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে 'অসৎ' উদ্দেশ্যে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, যে কারণে আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে স্থানান্তর করছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে