কারফিউর অজুহাতে বাজারে পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া
প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। কারফিউর কারণে সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ১০- ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ২৬০ টাকার কাঁচা মরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
১৩৫ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকা। প্রতিকেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি বেড়ে হয়েছে ২১০-২২০ টাকায়।
বুধবার রাজধানীর সিপাহীবাগ কাঁচা বাজার, গোড়ান বাজার, খিলগাঁও রেলগেট কাঁচা বাজারসহ বেশকিছু খুচরা ও পাইকারি বাজার সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
এদিকে নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎই বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাজারে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সবজির বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা দাবি করছেন, মাঠে পর্যাপ্ত সবজি উৎপাদন হলেও কারফিউ'র কারণে ঢাকায় পর্যাপ্ত সবজির গাড়ি আসতে পারেনি। যেখানে চাহিদা ১০ গাড়ি সবজির সেখানে এসেছে ২ গাড়ি। যার জন্য উৎপাদন ভালো থাকলেও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে।
কারফিউর কারণে প্রায় সব ধরনের সবজি অল্প করে এনে দুটি ভ্যানে করে বিক্রি করছিলেন দক্ষিণ বনশ্রীর সবজি বিক্রেতা মাহফুজ ও তার ছোটভাই আলেক। অন্য সময় মেরাদিয়া হাটের পাশে সবজি বিক্রি করলেও দেশের চলমান অস্থিরতায় এখন দক্ষিণ বনশ্রীর অলিগলিতে সবজি বিক্রি করছেন এই খুচরা ব্যবসায়ী।
সবজির দাম সম্পর্কে মাহফুজ বলেন, বাজারে সব থেকে কম দামে বিক্রি হওয়া সবজির দামও প্রতিকেজি ৬০ টাকা করে। প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে পটোল, ঢেঁড়শ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পেঁপে, বাঁধাকপি। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
এই সবজি বিক্রেতা আরও বলেন, এ ছাড়া বেশি দামে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে
প্রতিকেজি বরবটি ১০০ টাকায়। হাইব্রিড শসা ৫০ টাকা, দেশি শসা মানভেদে ৮০-১০০ টাকায়। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। ২৬০ টাকার কাঁচামরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়। প্রতিকেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকায়। প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকায়, চালকুমড়া ৬০-৭০ টাকায়, ফুলকপি ৮০ টাকায়। কালো লম্বা ও গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় এবং সবুজ গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকায়।
এ ছাড়া বাজারে কলমি শাক ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কচুশাক ২০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা, পাটশাক ৩০ টাকা, ডাঁটা ৩০ টাকা, প্রতি আঁটি লাউশাক ৫০ টাকায় এবং পুঁইশাক প্রতি আঁটি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কারফিউর আগে থেকেই অবশ্য পেঁয়াজের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে মুদি দোকানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। ১৩৫ টাকার ছোট দেশি মসুরের ডাল দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকায়।
মুদি পণ্যের দাম সম্পর্কে দক্ষিণ বনশ্রীর মুদি দোকানি সৌরভ বলেন, মানভেদে মোটা আমদানি করা মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্যাকেট পোলাউয়ের চাল ১৫৫ টাকা, মানভেদে খোলা পোলাউয়ের চাল প্রতিকেজি ১১০- ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫-১৫৫ টাকায়। খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা।
এ ছাড়া প্রতিকেজি এলাচি ৪৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১৬০০ টাকা ও কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমিষের বাজারে এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়। কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩৪৫-৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।