চট্টগ্রামে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ২ জন নিহত, থানায় অগ্নিসংযোগ
প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:৪০
চট্টগ্রাম বু্যরো
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপিস্নট শাটডাউনে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় হামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নগরীর প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু, বহদ্দারহাট ও বাকলিয়া এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশ বক্সে। সংঘর্ষে দুইজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, একজনকে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার নাম পরিচয়
জানা যায়নি। এছাড়া গুলিবিদ্ধ দুইজনসহ আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। গুলিবিদ্ধ ২ শিক্ষার্থীর নাম ইসমাইল হোসেন (৩১) ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২০)।
বৃহস্পতিবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপিস্নট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল কম দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও যানবাহন ছিল তুলনামূলক কম। তবে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। অফিস-আদালতে উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। হাট-বাজার ও বিভিন্ন মার্কেটে ভিড় ছিল না। কিছু কিছু এলাকায় দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা এবং পণ্যবাহী পরিবহণের আসা-যাওয়া স্বাভাবিক ছিল।
বিভিন্ন সড়কে পুলিশ,র্ যাব ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী জড়ো হয়ে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সরানোর চেষ্টা করে। এতে সড়ক থেকে সরে না গেলে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চান্দগাঁও আবাসিক এবং বহদ্দারহাট এলাকা থেকে বের হয়ে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। এতে সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যদের সরে যেতে দেখা গেছে। প্রায় আধ ঘণ্টা পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে মো. আরাফাত নামে একজন বলেন, 'আমরা সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু পুলিশ বিনা কারণে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।'
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আশরাফুল আলম বলেন, 'আন্দোলনকারীদের আচরণ দেখে মোটে মনে হচ্ছে না তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। তারা একটি বাস ভাঙচুর করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এরপর তারা পুলিশের ওপর চড়াও হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বেশকিছু পুলিশ আহত হয়েছে।'
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে কোটাবিরোধী বিক্ষোভের আধঘণ্টা পর বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে কোটাবিরোধী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। কোটাবিরোধী শতাধিক ছাত্র কলেজ থেকে মিছিল সহকারে স্স্নোগান দিয়ে বের হয়। এ সময় তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে পুনরায় কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে মিছিলটি শেষ করে। এর আধাঘণ্টা পর ৩০/৪০ জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে বিএনপি অফিস ভাঙচুর করে। এসময় হামলাকারীরা বিএনপি অফিসের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম জানান, 'যুবলীগ নেতা জমির উদ্দিনের নেতৃত্বে বিএনপি অফিসে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনসহ মোট ৬টি ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে পর্যটক এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশন আসে। এটি আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'অন্যদিনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। তবে সঠিক সময়ে ৬টি ট্রেন স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে।'
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহিদুল ইসলাম ও জোরারগঞ্জ (ওসি) আবদুলস্নাহ আল হারুন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সতর্ক পাহারায় থাকায় কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিনের তুলনায় মহাসড়কে যান চলাচল কিছুটা কম বলে জানান তারা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের ডিসি শাকিলা সুলতানা জানান, আন্দোলনকারীরা শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে নিরাপদে স্থান ত্যাগ করার দাবি জানালে, পুলিশের পক্ষ থেকে বিকাল তিনটার মধ্যে অবরোধ স্থান ত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। পুলিশ তাদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে তারাও বিকাল তিনটার মধ্যে স্থান ত্যাগ করার প্রতিশ্রম্নতি দেন। সে অনুযায়ী তারা অবরোধ তুলে নেয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।