নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
সাড়ে ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে নীতি সুদহার
গত কয়েকবারের মতো এবারও মূল চ্যালেঞ্জ পরপর দুই অর্থবছর ধরে ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতিকে বশে আনা
প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৮
যাযাদি রিপোর্ট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ছয় মাসের জন্য নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। তবে টাকার প্রবাহ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য নতুন অর্থ ছাপানো থেকে বিরত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নীতি ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এতে নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, এসডিএফের হার ৭ শতাংশ ও এসএলএফের হার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় নীতিগত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে বলে মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিভিন্ন পর্যালোচনার পর মুদ্রানীতি কমিটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত বর্তমান কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
এদিকে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে আরও বেশি ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত অর্থবছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অথচ পুরো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রাই ছিল ১০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশে।
গত কয়েকবারের মতো এবারও মূল চ্যালেঞ্জ পরপর দুই অর্থবছর ধরে ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতিকে বশে আনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবশেষ দুই অর্থবছরে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে সুদহার বাড়াতে একের পর এক রেপো বাড়ালেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা হিমশিম খাচ্ছে। সরকারের নানান উদ্যোগও মূল্যস্ফীতির পারদকে দমাতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসে সুদহার ঠিক করার বিষয়টি বাজারের ওপর দিয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি 'ক্রলিং পেগ' চালু করে। এতে এক লাফে সাত টাকা বেড়ে ডলারের দর পৌঁছে ১১৭ টাকায়, যেটিকে নতুন পদ্ধতিতে 'মধ্যবর্তী দর' বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময়ে বাড়ানো হয় নীতি সুদহারও।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হারের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে, তা কিছুটা শ্লথ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বা বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক
বলেছে, এখন থেকে গাড়ি, ফলমূল, ফুল ও প্রসাধনীর মতো বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্রের বিপরীতে নগদ অর্থ জমা দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে। এর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানিতে অগ্রিম অর্থ জমার বিষয়টি শিথিল করা হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নীতি সুদহার না বাড়ানোর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার আরও কিছুটা বাড়ানো দরকার ছিল। সেইসঙ্গে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের যে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটা আরও কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
রীতি অনুযায়ী, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সংবাদ সম্মেলন না করে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।