কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গের্ যাব-পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঢাকাসহ গোটা দেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর মুহুর্মুহু গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল এবং ইটপাটকেল ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকায়ই নিহত হন ১৩ জন। বাকি ৬ জনের মধ্যে সাভারে ১ জন, নরসিংদীতে ২ জন, চট্টগ্রামে ২ জন এবং মাদারীপুরে ১ জন। হামলা-পাল্টা হামলায় আহতের সংখ্যা হাজারের ঘর ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ গুরুতর জখম দেড় শতাধিক।
সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকার রামপুরাস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, উত্তরা পূর্ব থানা, মিরপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ দুই ডজন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও বিজিবির গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় ডিসি-এসপির কার্যালয়, আওয়ামী লীগের অফিস ও বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পট অবরোধ
করে রাখেন। বিভিন্নস্থানে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্যকে জিম্মি করে। দুপুরে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে আটকে পড়া হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৪
পুলিশদের উদ্ধার করতের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নর্ যাবকে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হয়। বরিশালে আন্দোলনকারীরা স্বশস্ত্র বিজিবি সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ফেললে বেগতিক পরিস্থিতিতে তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হন।
সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে দূরপালস্নার যানবাহন চলাচল ছিল বন্ধ। নগর পরিবহণের সংখ্যাও ছিল খুবই নগণ্য। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও ব্যাংক-বীমাসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ দিনের তুলনায় অনেক কম। মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমলসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সারাদিন তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়নি।
এদিকে কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলন প্রতিদিন দুপুরের পর চাঙা হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এর উত্তাপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কোথাও কোথাও ভোরের আলো ফোটার আগেই আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ স্পটে দুপুরের আগ থেকেই পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলতে থাকে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উত্তরার আজমপুরের বিভিন্ন স্পটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে রয়েছেন জাহিদুজ্জামান তানভীর (২৫), সিরাজ (৩৫), আসিফ হাসান (২০), জসিম (৪৫)। বাকি দুইজনের মধ্যে একজনের মৃতু্য হয়েছে আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বলে হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ খান। অপর একজন উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবার রাতভর সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও রায়েরবাগ এলাকায় পুলিশ, র?্যাব ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। মুহুর্মুহু গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এ সময় সেখানে পুলিশের গুলিতে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদি ও অজ্ঞাত এক রিকশাচালক নিহত হন। এছাড়া ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন ওয়াসিম (৩০) নাজমুল (২২) নামে দুই ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে সাংবাদিক হাসান মেহেদীকে আনা হয়। তার শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে। নিহত অপর তিনজনের মধ্যে ওয়াসিমকে (৩০) আনা হয় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত নাজমুলকেও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে। আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি নাজমুলের শরীরে কোপের আঘাত রয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নাজমুলের স্বজনরা জানান, নাজমুল ব্যবসায়ী। ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক আগে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে বেশিরভাগ সময়ই বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পিছু হটে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা মেয়র হানিফ ফ্লাইভারের টোল পস্নাজায় দুই দফায় আগুন দেয়। তারা রায়েরবাগ ও শনিরআখড়া এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট অবরোধ করলে সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবরোধের কারণে মহাসড়ক ব্যবহার করে যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করতে বা বের হতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সড়কে অবস্থান নেয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দুই যুবকের পায়ে গুলি করে র?্যাব। ঘড়ির কাঁটা ১১টা পেরোতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নিতে গেলে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা পিছু না হটে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে কাজলাসহ টোল পস্নাজা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাড়ে ১২টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভারের টোল পস্নাজায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, হাজার হাজার আন্দোলনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তাদের হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা গেছে। ১০৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষ চলাকালে বিকাল ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলার পার বটতলা এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচাল গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারী রেজাউল ইসলাম অনিক ও সৌরভ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের গুলিতে রিকশাচালক আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, 'মৃতদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।'
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ধানমন্ডির ২৭ নম্বরসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় ধানমন্ডিতে ফারহান ফাইয়াজ রাতুল নামে রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী এবং আজিমপুরে মোহাম্মদ (২০) নামে অপর এক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মোহাম্মাদপুর সিটি হাসপাতালে ফারহান মৃতু্যবরণ করেন। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত ছিল। নিহত মোহাম্মদের শরীরেও ছররা গুলির ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো সংঘর্ষ না হলেও উত্তাল ছিল সায়েন্স ল্যাব ও আজিমপুর থেকে শুরু করে ধানমন্ডি, সাতরাস্তা, কলাবাগান, লালমাটিয়া, নিউমার্কেট, আজিমপুর ও আসাদগেট সংলগ্ন অধিকাংশ এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকায় সকাল থেকেই রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেস্নাগান দেওয়া শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে অস্ত্রধারীরা আন্দোলকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি রাপা পস্নাজার সামনে মূল সড়কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেখানকার ছয়-সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দেন। বেলা ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীদের প্রথমে ধাওয়া করে মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এরপরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। তখন শিক্ষার্থীরা লালমাটিয়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। যদিও পুলিশ বক্সে কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের পাশাপাশি রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায়ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে মিছিল করছেন। এ সময় বিভিন্ন অলিগলিতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাদের ধাওয়া করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এ সময় বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তারা। তখন কলাবাগান ও ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। এ সময় দুলাল মাতবর নামের এক গাড়িচালক নিহত হন। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের বুকে একটি গোল ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তবে এটি বুলেটের ক্ষত কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফরাজী হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হাসান জানান, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে দেড় শতাধিক আহত ব্যক্তি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন পুলিশও রয়েছেন।
এদিকে ঢাকার মহাখালী ও নাখালপাড়া এলাকায় রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা সেখানে রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও চলে। ফলে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, 'সকাল থেকে যে ট্রেনগুলো যাওয়ার সেগুলো চলে গেছে। ঢাকায় এসেছেও। কিন্তু ১টার পর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। ওই ঘটনার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে কোনো ট্রেন ছাড়ছি না। ঢাকামুখী ট্রেনগুলো বিমানবন্দর ও আগের স্টেশনগুলোয় রাখা হয়েছে।'
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। তাদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা রয়েছেন। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ আরজতপাড়া এলাকায় রেললাইনে, আরেকটি অংশ মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীরগেট যেতে সড়কে অবস্থান নিয়েছে। মহাখালীর আরজতপাড়ার কাছে রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারলে পুলিশও টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আবার আন্দোলকারীরা জড়ো হয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেয়। দিনভর এভাবে দু'পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। জবাবে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় গোলচত্বরের পুলিশ বক্স এবং অন্তত পাঁচটি মোটর সাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের টিয়ার শেলে ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, মিরপুরে ১০ নম্বর গোলচত্বরে শাহ আলী পস্নাজার সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও এতে যোগ দেন। এ সময় গোলচত্বর এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। আর আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন আল-হেলাল হাসপাতালের সামনে। আন্দোলনকারীদের আরেকটি দল অবস্থান নেয় মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের দিকে। পরে আন্দোলনকারীরা গোলচত্বর এলাকা তাদের দখলে নেন। সংঘর্ষের কারণে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরসহ আশপাশের সব দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে এক পাশে পুলিশ, মধ্যে শিক্ষার্থীরা এবং অন্য পাশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় পাল্টা-পাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ বক্সের আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আগুন দ্রম্নত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে উপরের দিকে ওঠে। ওপরে মেট্রোরেলের লাইনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিকাল তিনটার দিকে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মারধরের ঘটনায় একজন র?্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। আহতের নাম উত্তম। তিনি বাহিনীতে কনস্টেবল পদে কর্মরত। র?্যাব বলছে, তার অবস্থা সংকটাপন্ন। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময়র্ যাবের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
র?্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস জানান, উত্তরায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র?্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করছিল। এ সময় র?্যাবের গাড়িচালক কনস্টেবল উত্তমকে একা পেয়ে বেধড়ক মারপিট করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধার করে একটি স্থানীয় হাসপাতাল নেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত ৮৭ জন। এর মধ্যে ২৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
ঢামেকে আনার মধ্যে রয়েছেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ মো. রিয়াদ (২৩) আশরাফুল (২৩), পারভিন (৩০), সায়েন্সল্যাবে গুলিবিদ্ধ তানিম (১৭), যাত্রাবাড়ীর জনপথের মোড়ে ইটপাটকেলে আহত বিআরটিসি বাসের চালক উজ্জ্বল (৩২)। রামপুরা ব্রিজের ওপর ককটেল বিস্ফোরণে আহত ফজলুল হক মিলন (৫৫)।
এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন পিয়াস (২১), নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হাসিবুল (২২), সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী রাইভী (২০), গুলিবিদ্ধ উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সৌমিক (২০), সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান সাইফ (২৩), যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ পথচারী মইনুল ইসলাম (২৫), উত্তরা থেকে ইমরান (১৮), শিক্ষার্থী মোজাম্মেল (১৯), ৭১ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন (৩৭) ও ক্যামেরাপার্সন সৈয়দ রাশেদুল হাসান (৩২), বাদামতলী এলাকা থেকে কিশোর জয়নাল (১১), যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পথচারী আনোয়ার (৪৪), সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া (১৪), ইসমাইল (৪৬), ইমরান (১৮), মোজাম্মেল (২৫), তারেক (১৮), অজ্ঞাত (১৮), মুজাহিদুল ইসলাম (২৩), শাকিল (৪৪), তারেক (৩০), অজ্ঞাত (১৮), সিয়াম (১৮), আরিফ (১৮)।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী তাহাসিন (২৪), উত্তরা ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী তাহসিন (২৩), মারিয়া (২৩), প্রবাল (২২), গুলিবিদ্ধ কিশোর ইব্রাহিম (১৪), উত্তরা থেকে গুলিবিদ্ধ ওমর খান (২২), গুলিবিদ্ধ আলম (২৩), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ অর্ণক (২৩), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জীবন (৩০), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ হুদা (৩১), বিজয়নগর থেকে গুলিবিদ্ধ মামুন (২৫), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ জিহান (১৩), বাড্ডা থেকে গুলিবিদ্ধ মোহিত (২৩), উত্তরা থেকে গুলিবিদ্ধ ফজল শেখ (৩৫), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ রিপন (৩০), মতিঝিল থেকে গুলিবিদ্ধ সুজন (৩৭)।
শনির আখড়া থেকে গুলিবিদ্ধ মামুন (২৫), রামপুরা থেকে গুলিবিদ্ধ সোহেল রানা (৩৫), গুলিবিদ্ধ জামাল (৩৫), মমিন (১৮) ঢাকা কলেজ, অজ্ঞাত (২৩), উত্তরা থেকে অজ্ঞাত (১১), মাহমুদ (১৮), অজ্ঞাত (১৮), শাহবাগ থেকে ফারদিন (১৮), উর্দু রোড থেকে জাহিদ (২৪), উত্তরা থেকে অজ্ঞাত (২২), শনির আখড়া থেকে ইমরান (২০), হাসান (২২), অজ্ঞাত (৪০), এসআই তন্ময় (৩২), সাগর (৩৫), যাত্রাবাড়ী থেকে আপন (২৪), ইউসুফ (১৮), মেহেদী (২২), সজীব (২২), মেহেদী (২২), কায়েম (২২), যাত্রাবাড়ী থেকে মাহবুবুর রহমান (২০), মিনহাজ (২৪), ফাহিম (২৩), হাবিব (২৩), কবির (৩৬) কবির (৩৫) জামাল (৩৫), অজ্ঞাত (২৪) অজ্ঞাত (৩০), হাসান (১৮), হাসান (২৩) অজ্ঞাত (২৫), ইয়াসিন (১৮), মেহেদী (২২), নিলয় (২৭), আকাশ (৩০), রবিন (১৭), বাবলু (২৫), রহিম (৩৫), মুয়াজ (২১) ও বাবলু (৩২)।
এদের মধ্যে ২৭ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ফজলুল হক মিলন (৫৫), মোজাম্মেল (২৫), মহিদুল (২৩), রিয়াজ সিকদার (২৪), ইমরান (১৮), তাহসিন (২৪), জিহান (১৩), ইব্রাহিম (১৪), সুজন (৩৭), রাফি (১০), অজ্ঞাত (২৩), অজ্ঞাত (৪০), মো মবিন (১৮), হাসান (২২), মামুন (২৫), অজ্ঞাত (১৮), তারেক (৩৫), সজিব (২২), হাসান (১৮), সাগর (৩৫), মাহবুবুর রহমান (১৯), কবির (৩৬), অজ্ঞাত (২৫ ), ইউসুফ (১৮), মনোয়ারা (৬৫), হাবিব (২৩) ও অর্ণব (২৫)।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৮৭ জন আহতকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তাদের ঢামেকে আনা হয়। এর মধ্যে ২৭ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের হেলিকপ্টার নিয়ে উদ্ধার করেছের্ যাব। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে সকাল থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা পিছু হটেন এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আশ্রয় নেন। আন্দোলনরতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালান। একপর্যায়ে ক্যাম্পাস ভবনে ঢুকে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন ধরিয়ে দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। দীর্ঘসময় সেখানে অবরুদ্ধ থাকার পর বিকাল ৩টার পরর্ যাবের হেলিকপ্টার গিয়ে তাদের উদ্ধার শুরু করে।
নরসিংদী জেলখানা মোড়ে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার ওপর পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাহমিদ নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্র নিহত হয়েছে। সে নরসিংদী নাছিমা কাদির মোলস্না হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস (এনকেএম) এর শিক্ষার্থী। নিহত তাহমিদ নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর গ্রামের ডা. রফিকুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল তিনটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড় এলাকায় ছাত্র জনতা জমায়েত হতে থাকে। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ছাত্র জনতার সংগে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, টিয়ার শেল এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাহমিদের বুক ঝাঝড়া হয়ে যায়। তখন সহপাঠীরা তাকে দ্রম্নত নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃতু্য নিশ্চিত হয়। এরপর তার লাশ নিয়ে মহাসড়কে পুনরায় অবস্থান করে ছাত্রজনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে প্রায় শতাধিক ছাত্র জনতা আহত হন। এদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে, নরসিংদী জেলখানা মোড় এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আহত আরও পাঁচজনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বাজার বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে পাকিজা এলাকার দিকে এগিয়ে যান। সেখানে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সামনে এগোতে থাকলে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ সদস্যরাও আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি চালান।