সামাজিক দায়বদ্ধতা ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক জাহিদুল ইসলাম। নিজ গ্রামসহ উপজেলাজুড়ে অন্তত ৫০০ পরিবারকে এই কাজে যুক্ত করেছেন তিনি।
চলতি মৌসুমে অন্তত ১০ টন আদা ঘরে তুলবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। যার বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। যা দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সাংসারিক জীবনে জোগান দেবে বাড়তি অর্থের।
কৃষক জাহিদুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের বাহিরডাঙ্গা গ্রামে।
সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে সারিবদ্ধ বস্তায় লাগানো আদা গাছ। আগাছা পরিষ্কারসহ গাছের যত্ন নিচ্ছেন বাড়ির সদস্যরা। প্রত্যেক পরিবার ৫ থেকে ৫০০ বস্তায় পর্যন্ত আদা চাষ করেছেন। প্রতি বস্তা থেকে ১-২ কেজি পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। আদা উচ্চমূল্যের লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেকে বস্তার পাশাপাশি বাড়ির পাশের ভিটা জমিতে রোপণ করেছেন আদা।
তাদেরই একজন বাহিরডাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলাম। তিনি ১৩ শতক জমিতে ২৫টি লাইনে আদা চাষ করেছেন। প্রতি লাইনে রোপণ করা হয়েছে ১৬০টি আদার চারা। পাশাপাশি একই জমিতে পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন ১০০টি।
নজরুল জানান, প্রতিটি লাইন থেকে ১ মণ আদা উৎপাদিত হবে। সে হিসাবে ২৫টি লাইনে আদা মিলবে অন্তত ২৫ মণ। প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা হিসাবে যার মূল্য দাঁড়ায় তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া পেঁপে আসবে ১০০ মণ। প্রতি মণ ৪০০ টাকা হিসাবে বাড়তি ৪০ হাজার টাকা ঘরে তুলবেন তিনি।
উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথমত ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি।
জাহিদুল বলেন, এই গ্রামে বর্তমানে বস্তায় আদা চাষির সংখ্যা ৫০০ পরিবার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি পরিবারে ৫ থেকে ৫০০ বস্তায় আদা রোপণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বস্তার সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বস্তায় ১-২ কেজি আদা উৎপাদিত হয়ে থাকে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে অন্তত ১০ টন আদা ঘরে তোলা সম্ভব। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। উৎপাদিত এই আদা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সংসারিক জীবনে বাড়তি অর্থের জোগান দেবে।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু বলেন, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। বাড়িতে সিমেন্টের বস্তায় ফলানো যেতে পারে আদা-হলুদসহ নানা সবজি।
এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গায় এই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনো ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটি পড়েই থাকে। সেই বাঁশবাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন।
চাষ পদ্ধতি
প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে, সে জন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্য বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ। সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার ওপর ঢেকে দিতে পারলে ভালো হয়, এতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকবে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসবে।
আদা সংগ্রহ
জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এক-একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দুই কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে সবজি চাষ করা যেতে পারে।