বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, কাল্পনিক। বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ ও জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, এই দলটি সব সময়েই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। সুতরাং বিএনপি কখনোই জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এ সব কথা বলেন। দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার ও নাজেহালের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, 'ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বত্র সুশাসন ও আইনের শাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। তাই আমরা আবারও এই জনবিচ্ছিন্ন ভোটারবিহীন ৬
সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।'
তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা যে ধরনের বক্তব্য রাখছেন, তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তারা সরকারি দলের কোনো পদে অধিষ্ঠিত আছেন। আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী সরকারের এ ধরনের আগ্রাসী ও নির্মম ভূমিকার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গণতন্ত্র ও মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী চিরদিনই বিদ্বেষপরায়ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে এক ব্যক্তির মধ্যযুগীয় শাসন। অশুভ স্বৈরশাসনে সমাজ-সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ আজ বিপন্ন। প্রকৃত রোগ হচ্ছে অনির্বাচিত, অবৈধ, ফ্যাসিবাদী ডামি সরকার। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে কার ইশারায় রংপুরের আবু সাঈদসহ দেড় শতাধিক ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে, তা জনগণ ভালোভাবেই জানে। হত্যাকারী ও হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
গত রোববার দিবাগত মধ্যরাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক অফিসে আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।'
বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সৃষ্ট ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও নওগাঁ পৌরসভা মেয়র নাজমুল হক সনি, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, গণ-অধিকার পরিষদের তারেক রহমানসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারান্তরীণ ও নাজেহালের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক অফিস ভাঙচুর, বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারান্তরীণের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারের ভিতে কম্পন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধাচারণকারী দেশের জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ জারি করার মাধ্যমে জনগণকে চরম ভোগান্তির শিকার করা হয়েছে। হতাহতের প্রমাণ লোপাট করা হচ্ছে। দেশব্যাপী সংঘটিত এসব সরকারি অপতৎপরতা এবং পৈশাচিক ও বর্বরোচিত ঘটনা সারাবিশ্ব থেকে আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।' বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং এরশাদ আমলেও এমন নির্বিচার হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়নি।'