প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সারাদেশে নিম্নবিত্ত, গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচির কারণে সারাদেশে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত-শিবির সংঘবদ্ধভাবে মেট্রোরেল এক্সপ্রেসওয়ে, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং তছনছ করে। বাস-ট্রাকসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য যানবাহনে আগুন দিয়ে ধ্বংস করেছে। এমতাবস্থায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার গত ২০ জুলাই থেকে সাময়িকভাবে সান্ধ্য আইন জারি করতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, এ কারণে নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষের উপার্জনের স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা প্রতিদিনের উপার্র্জনে সংসার নির্বাহ করেন যেমন- রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, পরিবহণ শ্রমিক ইত্যাদি নানা পেশার মানুষকে নিদারুণ কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'এমতাবস্থায় আমি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং
এর সব সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।'
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা করোনাভাইরাস মহামারির সময় সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, বর্তমান এই ক্রান্তিকালেও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, 'একই সাথে সমাজের বিত্তবানদের প্রতিও আমার অনুরোধ, আপনারাও আপনাদের আশেপাশের গরিব-দুঃখী, খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের জন্য সমাজ কল্যাণমূলক একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
নরওয়ের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার সভেনডসেন মঙ্গলবার এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণের জন্য তাদের সমাজসেবার কারণে বঙ্গবন্ধু স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোকে খুবই পছন্দ করতেন এবং তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অনুরূপ সামাজিক সেবা নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রেস সচিব বলেন, সাক্ষাৎকালে উভয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত এ তথ্য জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, সরকার ইতোমধ্যে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এবং এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের উলেস্নখ করে নরওয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। কারণ নরওয়ে ছাড়া স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে বাংলাদেশের মিশন রয়েছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সুবিধাজনক সময়ে নরওয়েতে দূতাবাস খোলার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
এসপেন রিকটার সভেনডসেন বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি মহামারি পরিস্থিতির মাঝামাঝি সময়ে এখানে এসেছিলেন এবং সরকারের কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার সাফল্য দেখে অভিভূত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান 'বিশ্বমানের' জাহাজ ভাঙা শিল্পের উলেস্নখ করে বলেন, বাংলাদেশ পূর্বের অবস্থান থেকে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করে জাহাজ ভাঙা শিল্পে এক নম্বর দেশে পরিণত হয়েছে।
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ সব বিধি ও পরিবেশগত বিষয় মেনে চলাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা বজায় রাখলে এ শিল্পে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়তা ও সহানুভূতি অব্যাহত রাখার জন্য নরওয়ের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, নরওয়ে ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। তারা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের জন্য দাতাগোষ্ঠীর বৈঠকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বাংলাদেশের বিপুল উন্নয়ন সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসস'র