মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

সিপিবি ছাড়লেন মনজুরুল আহসান খান

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মনজুরুল আহসান খান

দল পরিচালনা নিয়ে অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খান।

দলের সাবেক এই সভাপতি সর্বশেষ সিপিবির উপদেষ্টা পদে ছিলেন। এর আগে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে গত ফেব্রম্নয়ারিতে তাকে চিরতরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ এবং ছয় মাসের জন্য দলের সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সেই শাস্তির পাঁচ মাসের মাথায় রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনজুরুল আহসান খান সিপিবি থেকে তার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলেন।

তিনি অভিযোগ করেছেন, 'পার্টি পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অগ্রাহ্য করে গায়ের জোরে, আধিপত্যবাদী কায়দা চলছে।'

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'আপনারা আগেই এটা জেনেছেন যে, গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারিতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি সভায় মনজু ভাই (মনজুরুল আহসান খান) পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য তাকে আমরা

কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছি এবং পার্টির সদস্যপদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছি। তখন কেন্দ্রীয় কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এই সময়কালে উনি যদি আরও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তাহলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের পার্টির ১২ ও ১৩ তারিখে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ছিল, সেই সভায় উনার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ উনি আর আমাদের পার্টির সদস্য না।'

মনজুরুল আহসান খান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে পদত্যাগ করেছি। গত ৩ জুলাই আমার পদত্যাগপত্রটি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করি এবং তারা সে পত্র গ্রহণ করে।'

পাকিস্তান আমলে ৬০-এর দশকে বাম রাজনীতিতে যুক্ত হন মনজুরুল আহসান খান। ১৯৯৯ সালে তিনি সিপিবির সভাপতি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন টানা ১৩ বছর। ২০১২ সালে সভাপতি পদে পরিবর্তন এনে তাকে দলের উপদেষ্টা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে নিজের পদত্যাগপত্রটিও সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছেন মনজুরুল আহসান খান। সেখানে সিপিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, 'আমি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য এবং জীবিত কমরেডদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আছি। আমার বিরুদ্ধে সাতবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বার অভিযোগ পাওয়ার পর আমি সে সম্পর্কে তদন্ত করতে বলেছিলাম। আপনারা তদন্ত না করেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'সাম্প্রতিককালে লুটপাটতন্ত্র, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে 'বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প' গড়ার জন্য কংগ্রেসে গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থেকে বিচু্যত হয়ে বিশ্বাসঘাতকতামূলক সুবিধাবাদী-সংস্কারবাদী লাইন অনুসরণ করে চলেছেন। পার্টি পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অগ্রাহ্য করে গায়ের জোরে, আধিপত্যবাদী কায়দায় ও হুকুমদারির রেজিমেন্টেশনের পদ্ধতিতে পার্টি চালাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমি পার্টি থেকে পদত্যাগ করছি।'

পদত্যাগপত্রে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, 'পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে যে বিপুল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি এবং এর সঙ্গে সঙ্গে মার্কসবাদী দর্শনের যে মর্মবাদ আত্মস্থ করেছি; তা আমার জীবন-পথের পাথেয় হয়ে থাকবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পার্টির অন্যান্য কমরেড যারা এখনো বিপস্নবী আদর্শের প্রতি অবিচল, তারা পার্টিকে সঠিক পথে নিয়ে আসবে এবং বিশ্বাসঘাতকদের পার্টি থেকে চিরতরে বহিষ্কার করবে।'

মনজরুল আহসান খানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমার যা কিছু বলার তা পদত্যাগপত্রে বিস্তারিতভাবে বলেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে