স্বাস্থ্য ব্যয় :বছরে দারিদ্র্য হচ্ছে ৬১ লাখ মানুষ
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়, যা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে গিয়ে ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে ডায়াগনস্টিকের জন্য ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, কনসালটেশনের জন্য ১০ দশমিক ৩১ এবং পরিবহণের জন্য খরচ হয় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন- বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সামন্ত লাল সেন বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা অনেক। সব রাতারাতি শেষ হবে না। তবে আমি চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সবার সহায়তা লাগবে। মানুষের পকেট থেকে যাতে অধিক অর্থ স্বাস্থ্য খাতে চলে যায়, সে জন্য আমি হেলথ ইন্সু্যরেন্স করব। এ জন্য ভারতের মোদি কেয়ারের মতো কিছু করা যায় কিনা, সেটি ভাবা হচ্ছে। তবে একটু সময় লাগবে।
গবেষণাপত্রে ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, ১৯৯৭ সালে চিকিৎসার পেছনে মানুষের পকেট থেকে চলে যেত ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৬৮ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২১
সালের হিসাবে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যয় সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০, ভারতে ৪৯ দশমিক ৮০, শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম খরচ হয় মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তির পকেট থেকে যে অর্থ ব্যয় হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে যায় ক্যানসারের পেছনে। এতে ব্যয় হয় গড়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। এ ছাড়া কোভিডের সময় খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৭০৯ টাকা। হার্টের অসুখের জন্য ৯৯ হাজার ৭১৫ টাকা, লিভার অসুখের জন্য ৭৮ হাজার ৯৪৩ টাকা এবং জন্ডিসে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। সবচেয়ে কম খরচ হয় জ্বরের কারণে।
তিনি আরও বলেন, একজন রোগী হাসপাতালে গেলে মানুষের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে, এরপর অপারেশনে ২৩ শতাংশ, ডায়াগনস্টিকে ১৭ শতাংশ, বেড চার্জ বাবদ ১৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ১৪ শতাংশ। মানুষ ওষুধ কিনতে যে মোট ব্যয় কওে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করে ফার্মেসিতে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় করতে গিয়ে মানুষ দারিদ্র্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হেলথ ইন্সু্যরেন্স করা প্রয়োজন।