বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল

শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরানোর বীরত্বে আত্মহারা আ'লীগ

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনসহ পুলিশি হামলার হুকুমদাতারা 'মানবতাবিরোধী ও মনুষ্যত্বহীন'। শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরানোর বীরত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী এখন আত্মহারা। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর ছাত্রলীগকে দিয়ে নৃশংশ হামলা চালিয়েছে সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে রক্তাক্ত পন্থায় দমনের যে দৃশ্য দেশবাসী অবলোকন করল, তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আরেকটি হিংসার অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে সংযোজিত হবে।' আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এদের হাতে জনগণ, রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কখনোই নিরাপদ নয়। সন্ত্রাসীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরানোর বীরত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী এখন আত্মহারা। দমন-পীড়নের ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করে তারা দেশবাসীকে নিথর-নিস্তব্ধ করতে চায়। আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের ওপর যেভাবে স্টিমরোলার চালাচ্ছে, ঠিক একইভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে দমনের পন্থা গ্রহণ করেছে।' তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৈশাচিক হামলা চালিয়ে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে আহত করেছে। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে, সে জন্যই আন্দোলন দমাতে এখন রাষ্ট্রশক্তি নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এটাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য।' বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী সরকার ক্রমাগত প্রতারণা করে যাচ্ছে। কারণ, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পর চলতি বছর পুনরায় ভিন্ন কায়দায় কোটা পুনর্বহাল করলেন।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম আঘাত করতে যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ছাত্রলীগ লেলিয়ে দেয়, তারা মানবতাবিরোধী ও মনুষ্যত্বহীন। দুর্নীতি ও হানাহানি যাদের অবলম্বন, তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনেও শংকিত হয়ে পড়ে। কারণ, লুটপাটের ভাবধারায় চালিত সরকারের দ্বারা কখনোই নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কোনো অংশেরই অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সম্মিলিত কণ্ঠে আওয়াজকে নিস্তব্ধ করতে তারা ভয়ংকর হিংসার পথ বেছে নেয়।' ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা ও রক্তাক্ত করেছে : আমির খসরু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা ও রক্তাক্ত করেছে। এটা সারাদেশ ও বিশ্বের মানুষ দেখেছে। সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণঅধিকার পরিষদের (কর্নেল মশিউজ্জামান) সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আমীর খসরুূ। বৈঠকে আমির খসরু ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অধিকার চাইলেই কেউ বলবে ষড়যন্ত্র করছে, কেউ বলবে বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে, কেউ বলবে এটা রাজাকার, কেউ বলবে এটা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এগুলোকে মূলধন করে অনেকদিন জাতিকে তাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এগুলোকে আর মূলধন করার সুযোগ নাই। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে-স্বৈরাচার স্বৈরাচার'। অর্ধেক স্স্নোগান দিয়ে তো হবে না। পুরো স্স্নোগান শুনতে হবে। এখানে কেউ কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছে না। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো আর গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সেই কথা বোঝানোর চেষ্টাই করছে। এসব কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। নতুন প্রজন্ম সেই বক্তব্যটাই দিচ্ছে। সে জন্যই তারা আন্দোলন করছে।