মে মাসের তুলনায় জুনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭২৬টি। এর মধ্যে নিহত ৬৪৪ এবং আহত কমপক্ষে ১ হাজার ৮২ জন বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সোমবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যভিত্তিক এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
সংগঠনটি বলছে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত হয়েছিল। ওই মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ১৫.৬৭ জন। কিন্তু জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২১.৪৬ জন। সেই হিসাবে জুন মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ৩৬.৯৪ শতাংশ।
গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ২৬৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২৭ জন যা মোট নিহতের ৩৫.২৪ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৫০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন যা মোট নিহতের ১৯.৮৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ১০১ জন অর্থাৎ ১৫.৬৮ শতাংশ।
এই সময়ে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত, ৩ জন আহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩১টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র: দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী ২২৭ জন, বাসের যাত্রী ২৯ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৫১ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ আরোহী ৩৮ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পো-লেগুনা) ১২৮ জন,
স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র) ২৬ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৫৫ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৪৫টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ চিহ্নিত করে সংগঠনটি। এগুলো হলো ১. ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন ২. বেপরোয়া গতি ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা ৪. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ৯. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ১০. গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে ৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে ৪. পরিবহণ মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করতে হবে ৬. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে ৭. গণপরিবহণে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে ৮. রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে ৯. টেকসই পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে ১০. সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।