পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। তাদের দাবি, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। সোমবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউলস্নাহ তারার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে পিটিআইর অস্তিত্ব রাখা যাবে না। তথ্যসূত্র : ডন, এবিপি নিউজ
পাক তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বিদেশি অনুদান পাওয়া, ৯ মে-র সহিংসতায় সরাসরি জড়িত থাকা, সাইফার (রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস) মামলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, আমরা বিশ্বাস করি, তা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট।' বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী। ইমরান খানকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, 'আপনি আপনার রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন এবং আমেরিকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করতে গিয়েছিলেন।'
ইমরানের দলের স্বীকৃতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালে পাক সরকারের এ ঘোষণা 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
এ ঘটনার জেরে প্রায় দুই দশক পর আবার পাকিস্তানে শাসক বনাম সুপ্রিম কোর্ট সংঘাতের আবহ তৈরি হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সে দেশের শীর্ষ আদালত কার্যত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত খারিজ করে জানিয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের পিটিআই দলগতভাবেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ 'ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি'র ২৩টি সংরক্ষিত আসন পাওয়ার যোগ্য।
ওই মামলায় নির্বাচন কমিশনের যুক্তি ছিল, আনুপাতিক ভোটের হার অনুযায়ী শুধু স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলোরই নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত ৭০টি আসন প্রাপ্য। পিটিআইর স্বীকৃতি বাতিল হওয়ায় তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেতে পারে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ১৩ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ শুক্রবার সরাসরি সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের শুক্রবারের ওই রায়ের পরই প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছেন শাসক পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতাকর্মী। যার জেরে পাঞ্জাব, খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। কয়েকটি স্থানে পিটিআইর সঙ্গে শাসক জোটের সমর্থকদের সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। সংঘাতেই সেই আবহেই ইমরানের দলকে নিষিদ্ধ করার বার্তা দিলেন পাক তথ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্বীকৃতি বাতিল করায় দলগতভাবে ভোটে লড়তে না পারলেও গত ফেব্রম্নয়ারিতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে ইমরানের অনুগামীরা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ে ৮৪টি আসনে জিতেছিলেন। পরে তারা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে বিরোধী দলনেতার পদ পান। অন্যদিকে, শাসক জোটের পিএমএলএন ১০৮ এবং পিপিপি ২১টিতে জেতে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দলীয় মর্যাদা ফিরে পেয়ে ২৩টি সংরক্ষিত আসনের দখল পেলে সংখ্যার হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দল পিএমএলএনের সঙ্গে ব্যবধান কমবে পিটিআই। শাসক জোটের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও থাকবে না। সে কারণেই নিষেধাজ্ঞা জারির পদক্ষেপ বলে অভিযোগ।