দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে, তারা আশা করছেন সরকার তাদের দাবি পূরণ করবে।
সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে 'সন্তোষজনক' বৈঠকের পরদিন রোববার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক সভা হয় অনলাইনে।
সিদ্ধান্তের বিষয়ে
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন 'আজকের সভায় শনিবারের বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং এ নিয়ে বিস্তারিত অবহিত হয়েছে। যেহেতু আমাদের দাবি পূরণ হয়নি তাই আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। তবে, শনিবারের বৈঠকে আমাদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তাই আশা করছি আমাদের দাবি পূরণ হবে।'
এদিকে প্রতিদিনের মতো রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে নিজেদের কথা তুলে ধরেন শিক্ষকরা। তবে অন্যদিনের তুলনায় এদিন শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল কম।
সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' কর্মসূচি নিয়ে প্রজ্ঞাপন বাতিল করাসহ তিন দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা নিতে যাওয়া মানুষরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই যুক্ত হবেন ২০২৫ সালের ১ জুলাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের বিষয়ে তথ্য ছিল, সেটা সঠিক নয়। তাদের তিনটা দাবির মধ্যে এটাও একটা দাবি। সবার মতো তারাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে যোগ দেবেন, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ শিক্ষক নেতা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, একটা বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি মিটেছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম শনিবার বলেছিলেন, তারা আলোচনা করেছেন। আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। আলোচনা শুরু হওয়ায় তারা খুশি। অনলাইনে (জুমে) ফেডারেশনের সভা হবে। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রোববার সভা শেষে তিনি জানালেন তাদের কর্মসূচি চলবে।
সড়ক অবরোধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
এদিকে, সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' স্কিম বাতিলের দাবিতে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির কারণে বাহাদুর শাহ পার্কের চারপাশে যানজট তৈরি হয়।
সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামাল হোসাইন বলেন, 'আমাদের এই আন্দোলন কিছু অসাধু মহলের বিরুদ্ধে। আমলারা আমাদের ওপর প্রত্যয় স্কিম নামের একটি বোঝা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। অযৌক্তিক এই স্কিম বাতিল না হলে আমরা কেউই কর্মক্ষেত্রে ফিরব না, আমাদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে।'
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, 'পেনশন আমাদের অধিকার। আমাদের সেই অধিকারে থাবা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।'
কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বলেন, 'প্রত্যয় স্কিমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাজেহাল ও হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের দাবি কোনো অযৌক্তিক দাবি নয়। আমরা দেখেছি গতকাল আলোচনার নামে প্রহসন সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে মহাসমাবেশ ডাক দিব। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বুঝ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও আমরা কর্মক্ষেত্রে ফিরব না। প্রয়োজনে ইউজিসি ঘেরাও করব।'