সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

কোটা নিয়ে আদালত থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে

মুক্তিযোদ্ধারা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?, আমার সাবেক পিয়ন এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, সমালোচনায় কিচ্ছু যায় আসে না, অভ্যস্ত হয়ে গেছি দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুদান দেবে চীন

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিষয়টি এখন আদালতে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কিছু করার নেই। সদ্য-সমাপ্ত চীন সফর নিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। কোটা নিয়ে এর আগে আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালে সরকার নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল। সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'কোটা বাদ হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১ \হদিলে কী অবস্থা হয়। সর্বশেষ বিসিএসে ফরেন সার্ভিসে মাত্র দুইজন মেয়ে এবং পুলিশ সার্ভিসে চারজন মেয়ে সুযোগ পেয়েছে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'তখন তারা বলেছিল, নারী কোটা চাই না। মেধা দিয়ে চাকরি পাবে, সে কি মেধা দিয়ে চাকরি পেয়েছে, বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে, প্রিলিমিনারিতেই জায়গা করতে পেরেছে?। এই বড় কথা যদি না বলত কোথাও না কোথাও তো চাকরি পেত।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের সব এলাকা তো সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব এলাকার মানুষের কোনো অধিকার থাকবে না?' শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। আন্দোলনকারীরা তার সিদ্ধান্ত চান-প্রশ্নকারীর এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'আদালত যখন কথা বলেছে, তারা যখন রায় দিয়েছে এখন আমার তো দাঁড়ানোর কোনো অধিকার নাই। রায়ের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানো কোনো অধিকার নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে, আমাদের কিছু করার থাকে না। এটা বাস্তবতা। এই বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছু করার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তারা আন্দোলন করতে থাকবে। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবে, কেউ কিছু বলছে না। তবে তারা কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। এর বাইরে কিছু করলে, পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া বা পুলিশের গাড়ি ভাঙা- এগুলো করতে যদি যায় তখন আইন তার আপন গতিতে চলবে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে? শেখ হাসিনা বলেন, ওদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবনবাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চ পদে আসীন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন, শুধু আন্দোলন না, যেসব ঘটনা ঘটাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিল। এসব দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয়, তা দেখা।' বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বলেছিলাম যে, কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে, তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। এরপর যখন আন্দোলন শুরু হলো, সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনোদিন ভাবেনি। এমনকি কোথাও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি। ডিসি, এসপি, ওসিসহ সব জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' আমার সাবেক পিয়ন এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থ সম্পদের বিষয়টি সামনে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।' সরকার কঠোর হওয়ার কারণেই দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এর আগে কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এভাবে অভিযান করেনি। এর আগে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছি। দুর্নীতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এসব জঞ্জাল সাফ করতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই জানতে পেরেছেন।' নানা খাতে দুর্নীতির চিত্র সামনে আসছে। ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিষয়ে অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা বিশ্বাস করি না। আমার দায়িত্ব, অনিয়মগুলো ধরে দেশকে একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। দুর্নীতি নিচের দিকে বেশি হচ্ছে। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে ছিল, কাজই করা যেত না। সেখান থেকে পরিস্থিতি তো বদলেছে। হাত যখন দিয়েছি, ছাড়ব না। আপন-পর জানি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই থাকবে।' সমালোচনায় কিচ্ছু যায় আসে না চীন সফর নিয়ে সমালোচনায় কিচ্ছু যায় আসে না উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেই না। আমি এটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যারা এই কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন, তারা কি জেনে-বুঝে বলছেন, নাকি শুধু আমাকে হেয় করার জন্য বলছেন, সেটাই প্রশ্ন। সবসময় আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো, এভাবে কথা বলা। বলতে বলতে এত বেশি বলে, যারা বলছে বলতে দেন। এখানে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।' চীন সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও সমালোচকরা বলছেন, এই সফরে কোনো প্রাপ্তি নেই। তারা বড় ধরনের ঋণ দেবে না। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২১টি সমঝোতা স্মারক সই ও আরও সাতটি এমওইউ হয়েছে। যারা এ কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন, তারা কি জেনে-বুঝে বলছেন? নাকি শুধু আমাকে হেয় করার জন্য বলছেন? আমি বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেই না। ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ধরনের নেতিবাচক কথা বলে, এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।' তিনি বলেন, 'চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। এর আগে ভারত গেলাম, সেখানে বলা হয়েছিল ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে এসেছি। চীনে গেলাম, বলে কিছুই দেয়নি। এগুলো বলেই আসছে। ভারতের কাছে দেশ বেচা, চুক্তি বাতিল করতে হবে। এটা এক ধরনের লোকের মানসিক অসুস্থতা বলে মনে করি। মানসিক অসুস্থতা ছাড়া বানোয়াট কথা কেউ বলতে পারে না। তাদের জন্য করুণাই হয় আমার। তাদের নিয়ে কিছু বলার নাই।' চীনের সঙ্গে চুক্তির পূর্ণ তালিকা সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া হয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। ২১টি নামও আছে। আপনারা চাইলে পড়তে পারি। না অনেক সময় অনেকে বলেন। কিছুই হয়নি। কিছুই না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসছি। ওরা তে বলবেই। তারা আবার মনে কষ্ট পেতে পারে।' দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ-অনুদান দেবে চীন অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণে আকারে চীন বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি চিয়াংয়ের আমন্ত্রণে তিনি ৮-১০ জুলাই দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন সফর করেন। ৮ জুলাই বেইজিংয়ে পৌঁছলে তাকে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।' 'দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না' শীর্ষক ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার সফরসঙ্গী ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং চীনের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।' 'সম্মেলনে আমি চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।' প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি বাংলাদেশে তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীনের রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা তুলে ধরলে চীনের ব্যবসায়ী নেতারা আগ্রহ দেখান। 'চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং আয়োজিত এই সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রম্নপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য রাখেন এবং তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।' বাংলাদেশের ১০টি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির ১৬টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয় ওই সম্মেলনে। শেখ হাসিনা বলেন, ৯ জুলাই বিকালে তিনি চীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় তিনি আওয়ামী লীগ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দলীয় নেতাদের পারস্পরিক সফর বিনিময়ের ওপরও তারা একমত হন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন। তিনি জানান, সেদিন বিকালে তিনি তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ১০ জুলাই সকালে বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় বাংলাদেশ-চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক, বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সহায়তা, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা, বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয়ে আমরা আলোচনা করি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাংলাদেশের কৃষিপণ্য, চামড়া, ওষুধ প্রভৃতি পণ্য চীনে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানির অনুরোধ করি। বাংলাদেশ উৎপাদিত ৯৮ শতাংশ পণ্যের চীনে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা প্রদানের জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রণীত সাদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এসআইডিআই) বাস্তবায়নে তিনি চীনের অবকাঠামোগত ও আর্থিক সহায়তা কামনা করলে প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং ইতিবাচক সাড়া দেন। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি এবং এই বিষয়টিতেও চীনের সমর্থন লাভ করি। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন খাতে মোট ২১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া সাতটি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই অন্যতম। ১০ জুলাই বিকালে বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, '২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্ব পর্যায়ে উন্নীত হয়, যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে।' পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বৃহদাকার অবকাঠামো বিনির্মাণে চীনা সহায়তায় দেশটির প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানানোর কথাও সংবাদ সম্মেলনে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮০০ একর জমিতে শিল্প বিনিয়োগ করার জন্য প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের মাধ্যমে আমি চীনা উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইসিটির বিশেষায়িত অঞ্চলে চীনকে বিনিয়োগের অনুরোধ করি। বাংলাদেশের প্রতি চীনের অব্যাহত সমর্থনের কথা উলেস্নখ করে চীনের রাষ্ট্রপতি এখানে অধিকতর বিনিয়োগের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত মিয়ানমারের নাগরিক-রোহিঙ্গাদের অবস্থা এবং তাদের সমস্যার প্রেক্ষাপট উলেস্নখ করে এর সমাধানে আমি চীনের সহযোগিতা কামনা করি। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ ও চীনের পারস্পরিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করি। আমাদের এই ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক 'সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব' পর্যায়ে উন্নীত হয়। আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে- সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়', এটিকে মূলনীতি হিসেবে ধরে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলভাবে তার কূটনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা, ফিলিস্তিন সংকট, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন, জাতিসংঘ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই নয়, ঐতিহ্যগত দিক থেকেও এশীয় দেশ হিসেবে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের সংযোগ রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গবেষণা, শিক্ষা, আইসিটি, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাংলাদেশ এবং চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার এই সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ড একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।'