দিনে তিনজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

রোড সেফটির তথ্য

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০৯

যাযাদি রিপোর্ট
সড়ক দুর্ঘটনায় গত সাড়ে পাঁচ বছরে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থী। এই সময় দিনে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন সড়কে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত 'সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত : পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবসের ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন- রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গবেষণাটি করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫০ শতাংশই মারা গেছেন মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায়। আর আঞ্চলিক সড়কগুলোতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫-১৭ বছর বয়সি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে দুই হাজার ৬৪১ জন। আর ১৮-২৫ বছর বয়সি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭৮ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুযায়ী, মোটর সাইকেলের চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৮৩ শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনায় নিহত মোট শিক্ষার্থীর এটি প্রায় অর্ধেক। আর শিক্ষার্থীরা পথচারী হিসেবে যানবাহনের চাপা বা ধাক্কায় নিহত হয়েছেন এক হাজার ৫৩৪ জন। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৭২১ জন। আবার বাইসাইকেল আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৪৯৭ জন। অটোরিকশার চাকায় ওড়না বা পোশাক পেঁচিয়ে মৃতু্য হয়েছে ৮৪ জনের। গবেষণায় সড়কে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার কয়েকটি কারণ উলেস্নখ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ত্রম্নটিপূর্ণ সড়ক, অনিরাপদ যানবাহন, নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর মানসিকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা এবং অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিবেদনে নিজস্ব মন্তব্য তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির মতে, সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত অসংখ্য বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো টেকসই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, তা অনেকটা অবৈজ্ঞানিক ও সমন্বয়হীন। দেশের নৈরাজ্যকর সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত টেকসই পরিবহণ কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক পরিবহণ আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, সড়ক পরিবহণ খাতের স্বার্থবাদী গোষ্ঠী সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা। এই গোষ্ঠী নিজেদের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির স্বার্থে সড়কে বিশৃঙ্খলা বজায় রাখে। মাঝেমধ্যে গণপরিবহণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কমিটি গঠন ও সুপারিশ তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনো সুপারিশই আলোর মুখ দেখে না। মূলত কমিটি গঠন ও সুপারিশ তৈরির মধ্যেই দেশের সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। সংবাদ সম্মেলনে সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃতু্য কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বছরে একবার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা, সরকারি উদ্যোগে শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্লাস পরীক্ষায় সড়ক নিরাপত্তা-বিষয়ক প্রশ্ন থাকা, গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, অনিরাপদ যানবাহন বন্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটর সাইকেল চালানো ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা অন্যতম। ২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের বহনকারী পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে উল্টে ৪২ শিক্ষার্থীসহ ৪৫ জন নিহত হয়েছিল। সেই থেকে দিনটি 'মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস' হিসেবে স্থানীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হবে বলে সংগঠনটি মনে করে। সংবাদ সম্মেলনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ফেরদৌস খান, কোষাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।