এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি (রিজার্ভ) দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার রিজার্ভের এই অংক জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, 'আকুর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আমদানি দায় মেটাতে মে-জুন সময় বাংলাদেশ ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে আকুর এই দায় সমন্বয় করা হয়েছে।'
তবে আমদানি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার আকুর দায় আগের চেয়ে একটু কমেছে। এর আগে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের জন্য ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল বলে উলেস্নখ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আকুর বিল পরিশোধ করার পর গ্রস হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। ২ জুলাই গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতির হিসাবে ২ জুলাই রিজার্ভে ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। তবে এবার নিট রিজার্ভের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে, তা প্রকৃত রিজার্ভ নয়।
এর আগে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ যখন ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছিল, তখন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড
ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, নিট রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন বা তার নিচে নেমে গেছে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক নিট রিজার্ভ প্রকাশ করত না।
জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের উদ্যোগে ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় আকু। জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের ভৌগোলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য আকুর সদস্যপদ উন্মুক্ত। এর সদর দপ্তর ইরানের রাজধানী তেহরানে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ-এই ৯টি দেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্য ছিল। তবে রিজার্ভ সংকটে পড়ে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে আকু থেকে বেরিয়ে যায় শ্রীলংকা।
আকুর সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে যে আমদানি-রপ্তানি করে, তার দায় ২ মাস পর পর সমন্বয় করে। প্রতি দুই মাস অন্তর গড়ে সোয়া এক বিলিয়ন ডলারের মতো দায় শোধ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।