নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাগ এলাকায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের আলিশান ডুপেস্নক্স বাড়িতে তলস্নাশি চালিয়ে জিনিসপত্রের তালিকা করেছে জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুকক)। তালা ভেঙে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেখানে গৃহস্থালি সামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বাড়ি তলস্নাশির সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আনন্দ হাউজিং সোসাইটির কৃত্রিম লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে লাল রঙের আলিশান ডুপেস্নক্স বাড়িতে তলস্নাশি অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুর আলম। এ সময় দুদকের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান মাহমুদসহ প্রশাসনের
বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালতের নির্দেশে মালামালের তালিকা করেছি। এটি আবাসিক ভবন। ঘরে এসি, টিভি, কিছু শোপিস, বইপত্র, সোফা, বাতি, ডাইনিং ও ছয়টা চেয়ার রয়েছে। রান্নাঘরে হাঁড়ি-পাতিল, চায়ের কাপ ও অন্যান্য জিনিস আছে। সব মিলিয়ে একটা পরিবারের ব্যবহারের জন্য যেসব গৃহস্থালি সামগ্রী থাকা দরকার, সেগুলো আছে। জিনিসপত্রগুলো সাধারণ মানের মনে হয়েছে। মূল্যবান কোনো জিনিসপত্র নেই। তবে এগুলো জব্দ করা হবে না। তৈরীকৃত তালিকা আদালতে পাঠানো হবে। এরপর আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসবে, যে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
বাড়ির ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের কেন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর আলম বলেন, 'আমরা যেন নির্ভুলভাবে জিনিসপত্রের তালিকা করতে পারি, সেজন্য গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে নিয়েছি। কে বা কারা এই বাড়িতে আসা-যাওয়া করত, তা সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে এখনো দেখা হয়নি।'
দুদকের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী বলেন, 'আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনের রিসিভার এখন জেলা প্রশাসক। আমরা জেলা প্রশাসকের কাজে সহায়তা করতে এসেছি। মালামালের তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি আদালতে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে আমাদের অনুসন্ধান কাজ চলমান আছে।'
এর আগে গত ৬ জুলাই বিকালে জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বয়ে গঠিত টিম বাড়িটি ক্রোক করে সিলগালা করে দেয়। তবে ডিজিটাল লক থাকায় সেদিন বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়েছে, সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ২৪ কাঠা জমির ওপরে নির্মিত এই সম্পত্তির মালিক হিসেবে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মেয়ে মিজ ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর লেখা রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার এই সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণবাগ এলাকায় আনন্দ হাউজিং সোসাইটিতে কৃত্রিম লেক আছে। লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গায় লাল রঙের আলিশান ডুপেস্নক্স বাড়ি। এর মালিক পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। আট বছর আগে একই এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। পরে বছর চারেক আগে এই জমিতে ওই বাড়ি করেন।