সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের অবরোধের কারণে রাজধানীর মেট্রোরেলের ওপর যাত্রী চাপ বেড়েছে ব্যাপকমাত্রায়।
বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। টিকিটের লাইনের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। অনেকে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেও ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠতে পারছেন না। তাতে পস্ন্যাটফর্মেও বাড়ছে ভিড়।
সকাল থেকে আন্দোনলকারীরা সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, হাইকোর্টের কাছে মৎস্যভবন মোড়, বাংলামোটর, ফার্মগেট, আগারগাঁও অবরোধ করলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বেশিরভাগ সড়কে সকালে কিছু পরিবহণ দেখা গেলেও বেলা বাড়লে সেই সংখ্যা কমতে থাকে। তাই নিয়মিত যাত্রীদের বাইরেও অনেকে এদিন বাধ্য হয়ে মেট্রোরেল ধরতে স্টেশনে যান।
দুপুরের পর থেকে স্টেশনগুলোতে চাপ এত বেড়ে যায় যে, টিকিট হাতে নিয়ে অনেকে ট্রেন পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেননি।
সচিবালয় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা মহিবুল হাসান বলেন, 'ভিড় কাকে বলে দেখেন। সেই ২টায় স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন বাজে ৩টা। ট্রেন ইতোমধ্যে তিনটা চলে গেছে। আমি ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। সচিবালয়ে থেকে আগারগাঁও যাওয়ার পথে পথে অবরোধ। সেজন্য উপায়ান্তর না দেখে মেট্রোরেল ধরতে এসেছিলাম। তাতেও লাভ হলো না।'
শাহবাগ থেকে মতিঝিল এসেছেন
জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, 'শাহবাগ এলাকায় অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছে। কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছে না। সেজন্য শাহবাগ থেকে আমি মতিঝিলে এসেছি। দুপুর সাড়ে ১২টায় শাহবাগ স্টেশনে এলেও টিকিট পেতে আমার ৪৫ মিনিট লেগেছে। লম্বা লাইন। কিছু করার নেই। দুইটা ট্রেন মিস করেছি। পরে ট্রেনে কোনোমতে উঠে মতিঝিল এসেছি। ট্রেনের ভেতরে গায়ে গায়ে লাগা যাত্রীরা। ভীষণ চাপ ট্রেনের ভেতরে। কি যে অবস্থা। আমি নিজেও ট্রেনের ভেতরে কোনোভাবে দাঁড়িয়েছিলাম অনেক কষ্ট হয়েছে।'
মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, 'বাচ্চা নিয়ে ট্রেনের ভেতরে ভীষণ কষ্ট হয়েছে। আমি প্রায়ই মেট্রোরেল চড়ি। কিন্তু আজকে বুঝতে পেরেছি মেট্রোরেলের কষ্ট ভীষণ। আমার বাচ্চা রাগ করে আমাকে বলেছে, আম্মু আজকে এত ভিড় কেন? চল গাড়িতে যাই। তাকে তো বলতে পারছি না যে গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে আছে।'
কোর্টে মামলা সংক্রান্ত কাজ শেষ করে রিকশায় করে মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সালমান হোসেন। তিনি বলেন, 'বাস নাই, অনেক কষ্ট করে মেট্রোরেলের টিকিট নিয়েছি। অবস্থা এমন যে টিকিট কাটাই কঠিন। যে ভিড়, উঠতে পারব কি না চিন্তায় আছি।'
মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া। তিনি বলেন, 'জরুরি কাজে শ্যামলী যেতে হচ্ছে, টিকিট কাটার জন্য অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আজকে অন্য দিনের তুলনায় অনেক ভিড়।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাস্টমার রিলেশন অফিসার শরিফ চন্দ্র সরকার বলেন, 'সকাল থেকেই মেট্রোরেলে চাপ অনেক বেড়েছে। এখন যে চাপ দেখছেন সেটা কিছুই না। একটু পরে চাপ অনেক বেড়ে যাবে।'
এদিকে সর্বোচ্চ আদালত কোটার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করলেও সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার 'যৌক্তিক' সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
তাদের দাবি, শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে।