বহুল আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যের তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অফিসে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে উলিস্নখিত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক পাসপোর্ট আছে কিনা তা নিশ্চিত হতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে 'আপন ভুবন' নামে মতিউরের পিকনিক স্পট সম্পর্কে জানতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর পিকনিক স্পট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুদক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর ছদ্মবেশে সপরিবারে বিদেশ পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সত্যিই যদি তিনি সপরিবারে দেশ থেকে পালিয়ে থাকেন তাহলে পালানোর সময় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কোন পাসপোর্ট দেখিয়েছেন বা তাদের নামে একাধিক পাসপোর্ট আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে কোনো পাসপোর্ট আছে কি-না তা নিশ্চিত হতে চায় দুদক। যদি নামে বেনামে একাধিক পাসপোর্ট থাকে তাহলে বেনামীয় পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রটি বলছে, পাসপোর্ট তৈরিতে জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই লাগে। মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভুয়া নামে পাসপোর্ট তৈরি করা সহজ। এ জন্যই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভুয়া নামে জাতীয় পরিচয় হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মতিউরকে বেআইনিভাবে সহায়তা করার অভিযোগ এনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোপূর্বে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের একাধিক পাসপোর্ট তৈরি করার ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এছাড়া মঙ্গলবার গাজীপুরে মতিউর রহমানের মালিকাধীন পিকনিক স্পট 'আপন ভুবন' সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও এসি ল্যান্ডকে চিঠি দিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের কাছে পিকনিক স্পটের নামজারিসহ বিস্তারিত নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে তা ফেসবুকে দিয়ে আলোচনায় আসে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছাগলকান্ডের সূত্রধরে বেরিয়ে আসে মতিউরের দুর্নীতির তথ্য। তদন্তে মতিউর ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদ থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে আদালতের নির্দেশে মতিউরের নামে থাকা চারটি ফ্ল্যাট ও ৮৬৬ শতাংশ স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবের টাকার অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায়ই মতিউর রহমানের ব্যাংক হিসাব থেকে ৮ কোটি টাকা সরানোর তথ্য পাওয়া যায়। ১১৫টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাত্র ৪ কোটি টাকা আছে। অনুসন্ধান শুরুর পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন মতিউর ও তার পরিবার।
সূত্রটি বলছে, মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত করতে ২৩ জুন তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দলটি কাজ করছে।