উচ্চ শিক্ষায় সেশনজটের শঙ্কা বিপাকে সেবাগ্রহীতারা

'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের আন্দোলন

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা -সংগৃহীত
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা ৯ দিন ধরে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। মঙ্গলবারও কমবেশি একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বড় মিছিল করেছেন। কলাভবনের ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিনের মতো দাবির কথা তুলে ধরছেন। তারা আশা করছেন, দাবি নিয়ে শিগগির সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। এদিকে এই কর্মসূচির কারণে তালা ঝুলছে শ্রেণিকক্ষ ও অফিসে। ক্লাস, পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে অনেকেই সনদ সংক্রান্ত কাজসহ বিভিন্ন সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে। এ রকম পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষায় আবারও সেশনজট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের সর্বজনীন পেনশনের স্কিম 'প্রত্যয়' কর্মসূচি নিয়ে প্রজ্ঞাপন বাতিল করাসহ তিন দফা দাবিতে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। মঙ্গলবার কলাভবনের ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দিয়েছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা তার বক্তব্যে নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরে বলেন, 'যত দিন সমাধান না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।' অন্যদিকে এ বিষয়ে এখনো সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা বা বৈঠক হয়নি। তবে শিক্ষকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভেতরে-ভেতরে সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে। দাবির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা বৈঠক হওয়ার খবর আছে কি না, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যোগাযোগ চলছে। তবে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।' সেবা না পেয়ে ফিরছেন অনেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের সনদ নিতে এসে ফিরে গেছেন। মঙ্গলবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী জানান, তারা স্নাতকোত্তরের সনদ তোলার জন্য এসেছিলেন। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা সনদ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কোনো কোনো কক্ষে তালা দেওয়া রয়েছে। কেউ কেউ বসে গল্প করছেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের একজন অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, 'দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তবে বিদু্যৎ, পানি ও চিকিৎসাকেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে কিছু সেবা চলমান আছে।' রাজশাহী অফিস জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সনদ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সনদ তুলতে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে আসছেন। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করতে পারছেন না। শুধু প্রাথমিক তথ্য ও করণীয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে জানান, প্রশাসনিক ভবনের দপ্তরগুলো খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো কাজ করছেন না। মানুষ আসছেন, তাই দপ্তরগুলো খোলা রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্লাস-পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমসহ সব ধরনের কাজ থেকে বিরত রয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপনী বর্ষের (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সাময়িক সনদ তুলতে পারছেন না। সনদ তুলতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, সাময়িক সনদ তুলতে না পারায় অনেকেই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারছেন না। চাকরিতেও আবেদন করা যাচ্ছে না। দেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে কর্মবিরতি চলছে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একজন নেতা জানান, আন্দোলনটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। আবার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি নেই। ফলে সেগুলোতে সরাসরি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। তবে দাবির প্রতি সবার সমর্থন আছে।