শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি

বানভাসিদের টিকে থাকার লড়াই

পর্যাপ্ত খাদ্য ও সুপেয়ে পানি সংকট সড়ক ও বাঁধে ধস, তলিয়ে গেছে ফিশারি বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই বিদ্যালয়ে বানের পানি, পাঠদান বন্ধ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৪
বন্যার পানি কমলেও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বানভাসি মানুষ। ছবিটি রোববার গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা পুরাতন ফুলছড়ি ঘাট থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

দফায় দফায় বন্যায় বানভাসিদের জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রথম দফার সংকট কাটিয়ে উঠতে-না উঠতেই দ্বিতীয়বারের এ দুর্যোগের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দুর্গতরা। একদিকে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যেমন নাস্তানুবাদ, আরেকদিকে পর্যপ্ত খাদ্য ও সুপেয়ে পানি সংকটে ভুগছেন তারা। অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলেও বাকিরা কেউ স্বজনের বাড়ি, কেউবা ঘরের মধ্যে মাচা বেঁধে বসবাস করছেন। কেউ আবার তাঁবু টাঙিয়ে বাস করছেন সড়ক-মহাসড়কে। নিজেদের রক্ষার পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপাখি রক্ষার সংগ্রামও করে যাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই।

এছাড়া পানির চাপে বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও বাঁধে ধস নেমেছে। ফিশারি তলিয়ে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বন্যাকবলিত এলাকার কিছু কিছু বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ব্যহত হচ্ছে পাঠদান।

যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্গতদের জন্য প্রায় তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৬১৯টি মেডিকেল টিম।

ঠাকুরগাঁওয়ে ঘরে পানি প্রবেশ, রাস্তায় ভাঙন : ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষনের ফলে ঠাকুরগাঁওয়ের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়। এতে বেশকিছু এলাকা পস্নাবিত হয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে পৌর শহরের ডিসি বস্তি, এসি ল্যান্ড পাড়াসহ আশপাশের নিচু এলাকাগুলো ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

দুর্গতরা বাড়িঘর ছেড়ে শিল্পকলা একাডেমি ভবন, শালিখ স্কুলসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এসি ল্যান্ড পাড়ার কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, শুক্রবার সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। শনিবারও বিকাল অবধি বৃষ্টির ফলে নদীর পানি বেড়েছে।

পাশের একটি রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গেলেও এসি ল্যান্ড পাড়ার প্রবেশের রাস্তাটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে এই গ্রামের মানুষের চলাচলে ভোগান্তি বাড়বে। বিষয়টি জানার পর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বন্যা, আওয়ামী লীগ নেতা দ্বীপক কুমার রায়, মোস্তাফিজুর রহমান রিপন ও প্যানেল মেয়র মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মেয়র আঞ্জুমান আরা বন্যা বলেন, রাস্তাটির একাংশ ভেঙে গেছে। এটি যেহেতু সিএমবির প্রজেক্ট। তাদের পক্ষ থেকে প্রকৌশলীরা এসে ভাঙনের বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তারা যদি পদক্ষেপ না গ্রহণ করে তাহলে পৌরসভার পক্ষ থেকে

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।

সিরাজগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়

সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। পানি বেড়েছে অভ্যন্তরীণ নদনদীগুলোয়ও। আগামী ৮ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত) যমুনা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়া জেলার ৫টি উপজেলার ৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫শ' হেক্টর ফসলি জমিসহ অসংখ্য তাঁত কারখানা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কৃষক ও শ্রমিকরা। দুর্গত এসব এলাকায় বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৩শ' প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশের বিভিন্ন দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনের মুখে পড়েছে ছালাল চরে নির্মিত মুজিব কেলস্না। যে কোনো সময় তা যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খাসরাজবাড়ী গুইজাবাড়ী বাঁধ, তেকানি বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যদিও এসব বাঁধের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন বলেন, মুজিব কেলস্নার একটি অংশের বস্নক দেবে গেছে। ইতোমধ্যে বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তারা।

বানভাসিদের জন্য ২৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ পেয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে চাহিদামতো এই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান বলেন, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৮টি, কাজিপুরে ১০টি, শাহজাদপুরে ৫টি, বেলকুচির ৪টি ও চৌহালী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য ইতোমধ্যে ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৩শ' প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ৩৪১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রোববার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেমি, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া পয়েন্টে ৫৫ সেমি ও চিলমারী উপজেলার চিলমারী পয়েন্টে ৬৫ সেমি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অন্যদিকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার তালুকশিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৪০ সেমি এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ৩১ সেমি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া উপজেলার কাউনিয়া পয়েন্টে ১১ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় নদনদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলসমূহের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ ৭ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাকবলিতদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা লক্ষ করা গেলেও বেসরকারিভাবে তেমন ত্রাণ সহায়তা দেখা যায়নি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যাকবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩, কিন্তু পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবিলায় ৩১৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও প্রায় ১৯ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় আরও চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজারে তলিয়ে গেছে ৯৮১ ফিশারি

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, দুই ধাপের বন্যায় মৌলভীবাজারের ৬টি উপজেলার ৯৮১টি ফিশারি তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। রোববার বন্যাক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ফিশারি মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা এই ক্ষতির কথা জানান। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ছ'টি উপজেলার জলমগ্ন এলাকার বিভিন্ন ফিশারি থেকে ৭১৮ মে.টন মাছ হাওড়-বাঁওড় ও নদীতে গিয়ে মিশে গেছে। আরও ৭১ লাখ টাকার পোনা মাছ গেছে নদী ও হাওড়ের উন্মুক্ত জলে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি টাকার।

এদিকে দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার মনু ও ধলাই নদে পানি কমলেও কুশিয়ারা নদীতে পানি কমছে যৎসামান্য। কুশিয়ারায় রোববার বেলা ৯টা পর্যন্ত বিপৎসীমার মাত্র ২ সেমি নিচে এসেছে পানি। জুড়ী নদে এখনো বিপৎসীমার ১৭৩ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর মিলে ছয় উপজেলার ৩ লাখ মানুষ বন্যাক্রান্ত। দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কুশিয়ারা নদীপাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ, ফতেপুর ও সদর উপজেলার মনূমুখ ও খলিলপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। কুশিয়ারা পাড়ের এই চার ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক ফিশারি রয়েছে। দীর্ঘ বন্যায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ফিশারির পাড় তলিয়ে গিয়ে সব মাছের পোনা নদীতে হারিয়ে গেছে। রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার একটি ফিশারির সব পোনা হারিয়ে গেছে। এতে আমার ২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের সুয়েজ আলী বলেন, গ্রামের ফজর আলী'র ৩টি ফিশারি, সদরুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান'র আরও ২টি ফিশারি মিলে প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের শামীম আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম, আমীর আলী জানান, তাদের ফিশারিসহ কেশরপাড়া ও সুনামপুর গ্রামের মোট ১৫টি ফিশারির প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের বিলাল উদ্দিন বলেন, পাউবো সড়কের পাশে তার বড় একটি ফিশারি তলিয়ে গেছে। এই ফিশারি থেকে বছরে তিনি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন। তিনি কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, মৎস্য আটকাতে জাল দিয়ে ব্যারিকেড দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। মাছ প্রতিনিয়ত বের হয়ে যাচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বন্যাক্রান্ত এ জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৯৮১টি ফিশারি তলিয়ে গেছে। এতে ৭১৮ মেট্রি.টন মাছ ও ৭১ লাখ টাকার পোনা মাছসহ মোট ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়ায় ৪৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নতুন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আশা করছে পানি দ্রম্নতই কমতে শুরু করবে। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৭-৮টি পয়েন্টে পানি চুইয়ে ভিতরে আসছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে এটি বাঁধের জন্য এখনই হুমকি হয়ে ওঠেনি। নদীতীরবর্তী এলাকা ও যমুনার চরাঞ্চলে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানিয়েছে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে বলে জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কার্যালয় থেকে জানান হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে পানি বৃদ্ধির গতি কমলেও শনিবার বিকালে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় এগুলোয় শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী সারিয়াকান্দিতে ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

জামালপুরে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন দুই লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'বন্যার কারণে ১০৫টি প্রাথমিক ও ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গতদের জন্য ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১১টি মেডিকেল টিম।'

সিলেট নগরে পানি কমছে, উপজেলায় অপরিবর্তিত

সিলেট অফিস জানায়, নগরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরে যাচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদুনদীর বাঁধ ভেঙে ওইসব এলাকা পস্নাবিত হয়েছে।

পা?নি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ?্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার চার?টি পয়েন্টে পা?নি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবা?হিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৫৩ সে?ন্টি?মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। কু?শিয়ার?া নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ৮০ সে?ন্টি?মিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৩ সে?ন্টি?মিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পা?নি বিপৎসীমারা ৯৭ সে?ন্টি?মিটার ওপর দিয়ে প্রবা?হিত হচ্ছে।

সিলেটের জ?কিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে এবং পা?নি উপচে বি?ভিন্ন এলাকা পস্না?বিত হয়েছে। বিয়ানীবাজারের মু?ড়িয়া ইউপির সদস?্য বদ?রুল ইসলাম বলেন, ব?ন?্যা প?রিস্থিতির উন্ন?তি হয়?নি। বন?্যার পা?নি গত কয়েক? দিনের মতো একই জায়গায় রয়েছে।

সিলেট নগরে জলাবদ্ধ অবস্থার কিছুটা উন্ন?তি হলেও মানুষের ভোগান্তি কমছে না। নগরবাসী ঘর থেকে বের হলেই পা?নিতে নেমে যাতায়াত করতে হচ্ছে।? নগরের শাহজালাল উপশহর ডি বস্নক এলাকার বা?সিন্দা ফাহাদ মো. হোসেন বলেন, ঘর ও সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর গোছাতে এখন ভোগা?ন্তি পোহাতে হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বৃষ্টি কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আরও কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রম্নত উন্নতি হবে।

বন্যার্তদের চিকিৎসায় ৬১৯ মেডিকেল টিম

এদিকে, চলতি মৌসুমে বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৬১৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, কিছু অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, চাহিদা পাওয়ামাত্র তা সরবরাহ করা হচ্ছে।

রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, চলমান দ্বিতীয় দফার বন্যায় ১৮ জেলার ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা মানুষের জন্য প্রায় তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৬১৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং করেছি। এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় কীভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে