রাজধানীতে কলেজছাত্র খুন, অভিযোগের তির বন্ধুর দিকে
প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৪
যাযাদি রিপোর্ট
মিরপুর কমার্স কলেজের ছাত্র হত্যার ঘটনায় এক সহপাঠী ও তার আইনজীবী পিতাকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশের দাবি। প্রথমে সহপাঠীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রকাশ পায়। তবে মামলায় সহপাঠীর পিতাকেও আসামি করায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা মামলা সংক্রান্ত কোনো দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর শাহ আলী থানাধীন জাতীয় চিড়িয়াখানা সড়ক সংলগ্ন কমার্স কলেজের পাশে হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোয়ার্টারের একটি ভবনের তিন তলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জুবায়ের হাসান রাফিতের (১৭) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশ পাঠানো হয় ঢাকার শেরেবাংলানগর থানাধীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সুরতহাল শেষে রোববার নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে শাহ আলী থানায় নিহত জুবায়েরের সহপাঠী রাজিন চৌধুরী ও তার পিতা আইনজীবী ইকবাল চৌধুরীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাজিনের মা ঢাকার বাইরের একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে সহপাঠীর সঙ্গে তার পিতাকেও আসামি করার
বিষয়টি বেশ রহস্যজনক।
শাহ আলী থানার ওসি মো. তারেকুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, ছুরিকাঘাতে জুবায়েরকে হত্যা করা হয়েছে বলে সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হয়েছে। কারণ জুবায়েরের শরীরের অনেক কোপানোর দাগ দেখা গেছে।
জানা গেছে, জুবায়ের মিরপুর কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার পিতার নাম আবুল বাসার মিয়া। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাফিত সবার বড় ছিলেন। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকায়। জুবায়ের তার মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন।
নিহতের মামার দাবি, শনিবার সকালে কোচিং করার জন্য জুবায়ের বাসা থেকে বের হয়। বাসায় না ফেরায় বিভিন্ন জায়গা খোঁজাখুঁজি করা হয়। সন্ধ্যায় তার কলেজের এক শিক্ষক জুবায়ের হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে জানান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রাজিনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে।
তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে কলেজের কিছু বন্ধুর সঙ্গে জুবায়েরের ঝগড়া হয়েছিল। কলেজের শিক্ষকরা ঘটনাটি মীমাংসা করে দেন। তখন শিক্ষকরা রাজিতকে সাবধান করেছিলেন। বলেছিলেন, যাদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে তারা ছেলে হিসেবে ভালো না। তাদের থেকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। যাদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তারা জুবায়েরকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জুবায়ের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকায় এসে ভর্তি হয়েছিল কলেজটিতে।
মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার জসীম উদ্দিন মোলস্না যায়যায়দিনকে জানান, হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই রহস্য উদঘাটিত হবে। রোববার সন্ধ্যা নাগাদ আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। দুই পরিবারের মধ্যে কোনো পূর্ব যোগাযোগ ছিল না কিনা বা কোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বা মামলা সংক্রান্ত বিষয়াদিসহ অন্য কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিল কিনা তা জানা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আবু মাসুদ বলেন, হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি দুই পরিবারের সঙ্গে কোনো পূর্ব যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে কিনা তাও জানা যায়নি। নিহত জুবায়ের সম্পর্কে কোনো খারাপ তথ্য জানা যায়নি।