২০২৩-২৪ অর্থবছর
জুনে কমার পরও গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৭৩ শতাংশ
প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১০
যাযাদি ডেস্ক
জুনে খাদ্যপণ্যের দাম সামান্য কমলেও ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। এর মানে হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে গত অর্থবছর ১০৯ টাকা ৭৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে মূল্যস্ফীতির এই চিত্র।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন সরকার।
পরে তা সংশোধন করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা গেল না।
অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ৯.৭৪ শতাংশ ছিল। আর এ বছর মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এ বছর জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে সামান্য কমলেও টানা তৃতীয় মাসের মতো দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে। জুন মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ যা মে মাসে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল। এপ্রিলে ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে জুনে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ যা মে মাসে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ছিল।
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, মূল্যস্ফীতির কারণে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। জুনে শহর এলাকায় যেখানে সার্বিক
মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
গ্রামাঞ্চলে জুনে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০.৩৯ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে শহর এলাকায় খাদ্য খাতে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
রিজার্ভে টান আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতার মধ্যে আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে সরকারকে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে বিদু্যতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নীতি সুদহার বাড়ানো এবং সুদের হার বাজারভিত্তিক করার মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
এই কঠিন সময়েও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, 'মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্বনীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।'
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় এখন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে, দুই বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই পুরো সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তাতে লাভ হয়নি। বরং মূল্যস্ফীতি উচ্চ স্তরেই রয়েছে, মাঝেমধ্যে কেবল সামান্য একটু ওঠানামা করছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকরা বলেন, মূল্যস্ফীতি একধরনের কর; ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি বিবিএসের তথ্যের চেয়ে বেশি।