রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

কোটা আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই : প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গ্রম্নপ ছবিতে অংশ নেন -ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। 'হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে আন্দোলনের নামে যেটা আবার করা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় নষ্ট করা, এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতারা গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এ কথা বলেন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন

করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে একটা কথা আমি না বলে পারছি না, আমরা দেখছি যে কোটা আন্দোলনকারীরা দাবি করেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে। নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, এ ধরনের নানা কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা একবার বাতিল করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফলটা কী? তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার হিসাব যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যেত আগে কোটা থাকাতে মেয়েরা যে সংখ্যায় সুযোগ পেত, সে সুযোগ কিন্তু এই গত কয় বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। এমনকি অনেক অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল সেই অঞ্চলের মানুষগুলো কিন্তু বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না আর এ রকম বঞ্চিত হওয়ার কারণেই কেউ মামলা করে যাতে হাইকোর্ট একটা রায় দেয়। হাইকোর্টের রায়টা আমরা সব সময়ই মেনে নেই। কিন্তু আমরা এখন দেখলাম যে কোটাবিরোধী আন্দোলন এখন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে, সেখানে মেয়েরাও করছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা কয়জন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়েছিল আর কতজন পাস করেছিল, সেই হিসাবটা একটু বের করা দরকার। তারা দেখাক যে পরীক্ষা দিয়ে তারা বেশি পাস করেছিল, মেয়েরা বেশি পরীক্ষা দিয়ে বেশি চাকরি পেয়েছে কী না? সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক।' তিনি আরও বলেন, 'আর হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।'

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে কয় দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চলে আসছিল। একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রসঙ্গে বলেন, 'সর্বজনীন পেনশন স্কিম আমরা দিয়েছি, এটা সবার জন্য। এটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে। যেটা আমরা করতে পেরেছি।' তিনি আরও বলেন, 'শুধু সরকারি চাকরিজীবী তারাই পেনশন পায় আর বাকিরা বঞ্চিত থাকে।

কাজেই কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে, সে জন্য এই পেনশন স্কিমে বিভিন্ন স্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের যুব মহিলা লীগের প্রত্যেকেই এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পার। যুক্ত হতে পার নিজেদের একটা ভবিষ্যতের জন্য।' তিনি বলেন, 'যখন মানুষের বয়স হয়ে যাবে বা তারা কর্মক্ষম থাকবে না এর মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবকা নির্বাহের জন্য একটি নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। এটা কিন্তু আজীবন পাবে। আমি মনে করি, যারা আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের এ ধরনের পেনশন স্কিমে সংযুক্ত হওয়া দরকার আর যারা একেবারে প্রান্তিক বা নিম্নআয়ের মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য এতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।'

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুব মহিলা লীগ সবসময়ই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল, অনেক সময় তারা যেমন পুলিশের হাতে নির্যাতিত, তাই নয়, বিএনপির অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরাও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো যুব মহিলা লীগের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তাদের সেই অত্যাচারের অনেক ছবি, চিত্র অনেক কিছুই এখনো রয়েছে। অত্যাচার-নির্যাতনকালে মা-বোন বলে তারা কোনো সমীহ করেনি।

এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতারা ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে যুব মহিলা লীগের ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০০২ সালের ৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেত্রীকে নিয়ে যুব মহিলা লীগ গঠন করেন।

আমার জীবন অত্যন্ত

ঝুঁকিপূর্ণ : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার জীবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর যারা আমার নিরাপত্তা দেন, তারাও যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। আমি যখন আমার ছেলেমেয়ের জন্য দোয়া করি, যারা আমার সঙ্গে কাজ করে... তখন তাদের জন্য দোয়া করি।

রোববার ঢাকা সেনানিবাসে 'প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট'-এর (পিজিআর) ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পিজিআরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পিজিআরের নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে।

ফোর্সেস গোল- ২০৩০ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পিজিআরে এখন এপিসিসহ আধুনিক সরঞ্জাম যোগ করা হয়েছে। এর অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াতে সরঞ্জামাদি যেমন বেড়েছে; তেমনি এই রেজিমেন্টের সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করে না বাংলাদেশ। এ দেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির পানে এগিয়ে যেতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, দেশের সম্পদ বিক্রি করে কখনো ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করিনি বড় দেশ আমেরিকা... তাদের কোম্পানি গ্যাস তুলে বিক্রি করবে ভারতের কাছে, আমি রাজি হইনি। এ জন্য ক্ষমতায় আসতে পারিনি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় বসতে হবে এই দুর্বলতা কখনো আমার মধ্যে ছিল না।

দেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, খবরদারি করা বড় দেশগুলোও এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অস্বীকার করতে পারে না। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আমেরিকার চেয়ে এক পার্সেন্ট হলেও দারিদ্র্যের হার কমাতে হবে দেশে।

সেনানিবাসের অতীত চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় সেনানিবাসের আকাশ-বাতাস ভারি হতো বিধবাদের কান্নায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে