বানভাসি এলাকায় রোগবালাই বাড়ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

পাঠান সোহাগ
দেশে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ছে। বেশিরভাগ বানভাসি মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের দশটি জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ বন্যাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বিভন্ন জেলায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৯১ জন এবং মৃতু্য হয়েছে ১২ জনের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় সাধারণত পানিবাহিত রোগ বেশি হয়। কারণ হচ্ছে, দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির উৎস বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও দূষিত পানিতে সংক্রমিত হয়ে যায়। তাই ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-ই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এছাড়া পেটব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বর বা জন্ডিস হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দুই দফা বন্যায় দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোথাও পানি বাড়ছে আবার কোথাও পানি কমে আসছে। পানি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩০ মে থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ১০ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া, আরটিআই, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, সাপে কাটা, বন্যাজনিত \হকারণে আঘাতপ্রাপ্ত ও শ্বাসনালির প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৯১ জন। এছাড়া পানিতে ডুবে, ডায়রিয়া, সাপের কামড় ও বজ্রপাতে ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. জয়ন্ত কুমার সাহা যায়যায়দিনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সব তথ্য সংরক্ষণ করছে। আমাদের নির্দেশ দেওয়া আছে। কিছু কিছু জেলা থেকে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। সেগুলোর জন্য কাজ করছে কন্ট্রোল রুম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বন্যাপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলার সিভিল সার্জন, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সব সময় তদারকি করা হচ্ছে?। সরকারের সব মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ইউনিয়নভিত্তিক টিম তৈরি করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আক্রান্তদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বন্যা ও পরবর্তী সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ১ হাজার ৯২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎসকরা বলেছেন, পানিবাহিত রোগ বেশ জাটিল না হলে কেউ মারা যায় না। তবে এসব রোগ মানুষকে দীর্ঘদিন ভোগায়। এ থেকে মুক্ত হতে চাইলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পাশপাশি রান্না, খাবার এবং থালাবাসন ধোয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মেডিকেল অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করতে হবে। পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করলে পরিষ্কার পাত্রে পানি রাখতে হবে। যদি পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে বিস্নচিং পাউডার, ফিটকিরি বা হ্যালোজেন ট্যাবলেট দিয়েও পানি বিশুদ্ধকরণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে পাঁচ লিটার পানিতে এক কাপের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ বিস্নচিং পাউডার বা ফিটকিরি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের দশটি জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ বন্যাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, সিলেট জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীগুলোর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ জেলার ১৩টি উপজেলার ৩টি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮০টি গ্রাম বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার ৮০টি ইউনিয়নের ৮০ হাজার ২০৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ৬২ হাজার ৭৯১টি পরিবার পানিবন্দি। পাশাপাশি ৩ লাখ ১৪ হাজার ২২৭ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাইবান্ধা জেলার ৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে মোট ৭ হাজার ৮২০টি পরিবারের ৭১ হাজার ২৮০ জন লোক পানিবন্দি। এছাড়া জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় ৭ হাজার ১০৩টি পরিবারের ৩৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার মোট ৯টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৪০ পারিবারের পানিবন্দি আছেন ১২ হাজার ১৬৮ জন। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫-৫০টি পরিবার পানিবন্দি আছেন। বগুড়া জেলার ৩টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৭০টি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭৮ হাজার ৩২৩ জন। পাশপাশি কুড়িগ্রাম জেলার ৩৫০ দশমিক ১৭ বর্গ কি.মি এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।