চার জেলার সড়কে ঝরল ১৬ প্রাণ
প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের চার জেলায় পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন মারা গেছেন। জেলাগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮ জন। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের মুখোমুখী সংঘর্ষে ৫ জন, ট্রাকের ধাক্কায় একজন এবং ট্রাক-নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। পাবনায় একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ৫ জন নিহত হয়েছেন। নোয়াখালীতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আরোহী দুই ভাই-বোন মারা গেছেন। এ ছাড়া যশোরে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন একজন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীবাহী নাবিল পরিবহন ও আম বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ২৬ জন। দুর্ঘটনার সময় ট্রাকের ধাক্কায় আরও এক ভ্যানচালক নিহত হন।
নিহতরা হলেন- বাংলা বাজার এলাকার মমিনুল হকের চার মাস বয়সি মেয়ে সায়মা মেহনাজ, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ এলাকার সুরা আলীর ছেলে ট্রাকচালক হাসু (২৮), পীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আলী (৫৮), দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদের মেয়ে বিভা (১০) ও নাবিল বাসের সুপারভাইজার রাজেশ বাহাদুর (৩০)।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ভ্যানচালকের নাম স্বদেশ রায় (২৩)। তিনি সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা।
তিনি আরও জানান, ভোরে চকরামপুর গ্রামে ঢাকা থেকে রানীশংকৈলগামী নাবিল পরিবহণের একটি বাস ও বিপরীত দিক থেকে আসা আম বোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক হাসু (৪০) ও নাবিল কোচের হেলপার নিহত হন। এতে আহত হন ৩০ জন। পরে আহত ৩০ জনকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুসহ আরও চারজন মারা যান। হাসপাতালে ২৬ জন আহত ভর্তি রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দুর্ঘটনার পর কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, জেলার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ৫ কিশোর নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতরা পরস্পর বন্ধু, প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল তারা।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার পাবনা-ঈশ্বরদী-রাজশাহী মহাসড়কের দাশুড়িয়া সুগার মিলের সামনে এ ঘটনা। নিহতরা হলো- ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর-আজমপুর এলাকার মৃত মাসুমের ছেলে প্রাইভেটকারের চালক সিফাত (১৪), মৃত আনোয়ার কবিরের ছেলে বিজয় (২০), ইলিয়াস হোসেনের ছেলে শিশির ইসলাম (১৫), কুদ্দুস প্রামাণিকের ছেলে জিহাদ হোসেন (১৪) ও ভারইমারীর ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে সাওন (১৮)। এ ঘটনায় আহত একই এলাকার জাপান খন্দকারের ছেলে সাইদ (১৮), সুমন খন্দকারের ছেলে নাইকে (১৪)। দু'জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, রাতে ঈশ্বরদী থেকে কালিকাপুরের দিকে যাচ্ছিল প্রাইভেটকারটি। পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে বৈদু্যতিক খুঁটি ও গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'প্রাইভেটকারটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনার দিকে যাচ্ছিল। তবে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে চলার কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পাকশী হাইওয়ে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।'
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় ট্রাক ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নসিমনের চালকসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ট্রাক চালকসহ চারজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তার মোড়ে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নসিমন চালক জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পারইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মিনহাজুল (৩৮) ও একই এলাকার গরু ব্যবসায়ী আমান (৪৫)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আমবাড়ী হাট থেকে ছেড়ে আসা একটি গরুবাহী নসিমনের সঙ্গে দিনাজপুরগামী (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৯৩৮৮) একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে নসিমন চালক মিনহাজুল ও গরু ব্যবসায়ী আমানের মৃতু্য হয়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনায় সড়ক পরিবহণ আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী ও সোনাইমুড়ী প্রতিনিধি জানান, সোনাইমুড়ী উপজেলায় কাভার্ড ভ্যান চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আরোহী দুই ভাইবোনের মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ সংলগ্ন মদিনা মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. ইয়াছিন (১৭) ও বিউটি আক্তার (২৪) উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বগাদিয়া গ্রামের প্রয়াত বশির উল্যার সন্তান।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, সকালে অন্তঃসত্ত্বা বিউটি আক্তার তার ছোট ভাই ইয়াছিনকে নিয়ে সোনাইমুড়ী বাজারে চিকিৎসকের কাছে যান। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ফেরার পথে বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ কাছে এলে অটোরিকশাটিকে পেছন দিক থেকে বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ভ ভ্যান চাপা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় লোকজন ভাইবোনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই ঘাতক চালক পালিয়ে গেলেও হাইওয়ে পুলিশ কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের শার্শায় বাসচাপায় আলমগীর হোসেন (৪২) নামে এক পশু চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগুড়ি মুড়ির মিল নামক স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত আলমগীর হোসেন কলারোয়া উপজেলার কিসমত ইলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত আব্দুর রশিদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে বাড়ি থেকে পেশাগত কাজে মোটর সাইকেল নিয়ে বের হন আলমগীর হোসেন। পরে কাজ শেষে বাগআঁচড়া থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগুড়ি মুড়ির মিল নামক স্থানে পৌঁছালে যশোরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
নাভারন হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ জয়ন্ত কুমার দাস জানান, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস এবং মোটর সাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে। বাসচালক পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।