পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে দেশ

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অতিথিদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান -ফোকাস বাংলা
যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে দেশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝাট, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আর এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে নিজেদের টাকায়। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমাদের শিখিয়েছেন মাথা উঁচু করে চলতে। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বে খরস্রোতা নদীর মধ্যে পদ্মা নদী দ্বিতীয়। সেই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গ্যাস বিক্রি না করায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসতে পারেনি। গ্যাস বিক্রি করে শেখ মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় আসবে না। কিন্তু সেই সময় খালেদা জিয়া দেশের গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।' শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশবাসী পাশে ছিল বলেই জ্ঞানীগুণীদের বাধা সত্ত্বেও সব অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। সবাই না করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জটিল স্থাপনা আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিকভাবে এখন আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে চলছি। আগামী দিনে যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।' দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িতদের কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আজ এখানে এসেছি। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু পদ্মা সেতুর বিষয়টি একেবারেই আলাদা।' তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির প্রমাণ চেয়েছিলাম আমি। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছিলেন তারা, আমি করিনি। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করেছি।' অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটা ব্যাংকের এমডির পদের জন্য একজন নোবেলজয়ী এত লালায়িত কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পেলাম না। হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যে বড় দেশ তাকে (ড. ইউনূস) প্রমোট করে, সে দেশের রাষ্ট্রদূত আমার অফিসে আসেন। আমার অফিসারদের ধমকান। বলেন, এই এমডির পদ না থাকলে এই টাকা (পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন) বন্ধ হয়ে যাবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ড. ইউনূসকে নিয়ে কোনো মার্কিনির কথা শুনব না। দেখাও করব না। বলে দিয়েছিলাম তাদের। এমডি পদে থাকতে পারল না বলে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে সেতুর টাকা বন্ধ করল। মালয়েশিয়া সরকার পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় করেছি এটা।' পদ্মা সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে এই সমাপনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই একই মাঠে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুষ্ঠান হয়েছিল। সভাপতির বক্তব্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের পেছনে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উলেস্নখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের পর অনেকেই বিরোধিতা করেছিলেন। আমাকেও কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু বলিনি।' তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহস দেখাতে পেরেছেন। নেত্রী যখন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলেন, তখন সবার মধ্যেই শোরগোল- কেউ কেউ বলছেন পাগল নাকি! বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মা সেতু সম্ভব নাকি! তখন আমি পাশেই ছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্য করেও কতজন কত কথা বলেছেন। আজকে আমরা পদ্মা সেতুর সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিশ্বব্যাংক আমাদের হতাশ করে চলে গেল। অপবাদ দিয়ে সরে গেল। ২০১২ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, আমরা আমাদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। তখন আমাদের আশপাশে প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে অনেকে বসা ছিল। তারাও এটা নিয়ে নানান কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা করে দেখিয়ে দিয়েছি।' পদ্মা সেতু নিয়ে স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, 'ওয়াশিংটনে মাইনর অপারেশন করাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে পদ্মায় প্রথম স্প্যান বসবে। আমরা ওনাকে জানালাম, আপনি ফিরলে স্প্যান বসবে। তিনি বললেন, শেখ হাসিনার কারণে পদ্মা সেতুর কাজ যেন এক মিনিটের জন্যও থেমে না থাকে। যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে, ততদিন শেখ হাসিনার নাম উচ্চারিত হবে। মানুষের হৃদয়ে যে নাম লিখিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেখানেই বেঁচে থাকবেন তিনি। সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন ও পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতু থিমসং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেওয়া হয়।