বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সারাদেশের মতো পটুয়াখালী ও নাটোরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ দুই জেলায় কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের বরাত দিয়ে আমাদের পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর শহরের স্বনির্ভর সড়ক এলাকায় হামলায় অন্তত ১৪ জন নেতাকর্মী আহত হন।
আহতরা হলেন- রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক
সাকিল মিয়া, কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন শিকদার, মো. লিটু বিশ্বাস, মো. গাজী সুমন ও কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের আহ্বায়ক মো. আতিকুল ইসলাম দীপুসহ আরও ১০ জন। আহতরা বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা যায়, এর আগে সকাল থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগ দিতে যাওয়ার সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, জননেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব জেলায় সমাবেশ ছিল। এর অংশ হিসেবে পটুয়াখালীতে শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্কে আমাদের সমাবেশ ছিল। সমাবেশে আসার পথে আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীরের নেতৃত্বে তাদের গুন্ডা বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।
হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ কাজী আলমগীর বলেন, এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ? এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জসিম বলেন, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলা, ককটেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে কুপিয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এছাড়া হামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। আহত জেলা বিএনপির নেতা বাচ্চুসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বুধবার সকালে শহরের আলাইপুরে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন জানান, 'নাটোরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সমাবেশে যোগ দিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু আসছিলেন। এ সময় শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পা-হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে চলে যায়। তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।'
এছাড়াও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক চপ্পোল সাব্বির, শ্রমিক দলের দপ্তর সম্পাদক রফিকসহ ৬ জন আহত হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বাহিনী হামলা চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, 'যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা দলের কেউ না, বিএনপি থেকে আসা। একজন বিশেষ ব্যক্তির সন্ত্রাসী বাহিনী তারা। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতাকে দিনের বেলায় রাজপথে কুপিয়ে আহত করা, এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন কী করছে? তাদেরকে ধরছে না কেন? দল এদের দায় নিবে না। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রম্নত আইনের আওতায় নেওয়া হোক।'
নাটোর পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, 'বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আছে জেনে সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন ছিল। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।'