ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে নারী ও শিশুসহ শতাধিক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাজ্যের হাথরস জেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হিন্দু দেবতা শিবের পূজা উপলক্ষে রাজধানী নয়াদিলিস্ন থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে হাথরাস শহরের ওই গ্রামে পুণ্যার্থীরা 'সৎসঙ্গ' (প্রার্থনা সভা) অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) অন্তত ১২০ জন নিহত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো নানা রকম হিসাব দিচ্ছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, অন্তত ৮৭ জন নিহত হয়েছে। আর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হিসাবে মারা গেছে অর্ধশতাধিক। অন্যদিকে দ্য হিন্দুর হিসাবে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন।
হাথরসের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আশিষ কুমার বলেছেন, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার থেকে মৃতের সংখ্যার যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন নিহত হয়েছে। আর ইতাহ জেলার কর্মকর্তারা আরও ২৭ জনের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, মঙ্গলবার আয়োজন করা হয়েছিল সৎসঙ্গের। এই প্রার্থনা সভা ঘিরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বহু মানুষ একসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন। হঠাৎই হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। যেখানে এই সভা চলছিল, সেই রাস্তা সোমবার রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খোলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পর দেড়ঘণ্টা কেটে গেলেও প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
আলিয়াগড় রেঞ্জের আইজি শলভ মাথুর জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে খুব ছোট জায়গায় এই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। অল্প জায়গায় বহু মানুষের ভিড়ে দমবন্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মনে করা হচ্ছে তাতেই
হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল পুণ্যার্থীদের মধ্যে।
স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তীব্র গরমে অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে সমবেত পুণ্যার্থীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃতু্য হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেখানে সমবেত লোকজন হুড়োহুড়ি করে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলের পাশে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি বলেন, 'সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বের হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এর মধ্যেই সবাই একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে একজন আরেকজনের ওপর পড়তে থাকে। আমি যখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি, দেখি একটি মোটর সাইকেল দাঁড়ানো। পরে কোনো মতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হতে সমর্থ্য হই।'
পদদলিত হয়ে মৃতু্যর এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।'
এনডিটিভি জানায়, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গোটা ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি নজরে রাখছেন। কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্ত দল।
এদিকে পার্লামেন্টের ভাষণে হাথরসের ঘটনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, 'হাথরসের ঘটনায় অনেকের মৃতু্য হয়েছে। জখমদের দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করছি। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।'
প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মূ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করেছেন।
পদচাপার এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় মন্দিরে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ২০১৬ সালে কেরালায় একটি মন্দিরে হিন্দুদের নতুন বছর উদ্?যাপনের সময় আতশবাজির সময় ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১১২ জনের মৃতু্য হয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালে একটি মন্দিরের কাছে সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন পুণ্যার্থীর মৃতু্য হয়ছিল। সে সময় সেখানে চার লাখের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সেতুটি ধসে পড়বে, আর তখনই এই পদদলিত হয়ে মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালেও রাজস্থানের যোধপুরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জনের মৃতু্য হয়েছিল।