'মেয়ের প্রেমিকের হাতে' সাবেক এমপির স্ত্রী খুন
১৩ বছর পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন
প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
সাবেক এমপি ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিমা খান হত্যায় জড়িত সন্দেহে তার মেয়েসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৩ বছর আগের ওই হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভাষ্য, মেয়ের প্রেমিকের হাতেই 'খুন হয়েছিলেন' সেলিমা খান।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকার ধানমন্ডির পিবিআই সদরদপ্তরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তদন্তকারী সংস্থাটির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার। তিনি জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সাবেক এমপির বাসার বৈদু্যতিক মিস্ত্রি সুবল কুমার রায় (৫০), এমপির বড় মেয়ে শামীমা তাহের খান মজলিস ওরফে পপি ও আরতি সরকারকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পিবিআই প্রধান বলেন, 'এমপি সাহেবের বাসায় মাঝেমধ্যেই কাজের সূত্রে মহলস্নার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুবলের ডাক পড়ত। ওই আসা-যাওয়া করতে করতেই এমপি সাহেবের বিধবা মেয়ে পপির সঙ্গে সুবলের সম্পর্ক তৈরি হয়।'
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই বাসায় সুবলের যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায় জানিয়ে বনজ কুমার বলেন, 'ঘটনার দিন সকালে ফজরের নামাজের সময় সেলিমা খান ছাদে উঠেছিলেন হাঁটতে। সেখান থেকে
তিনি সুবলকে তার বাড়িতে ঢুকতে দেখেন। তিনি সুবলের নাম ধরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে ছাদ থেকে নামতে থাকেন। তখন সুবল ও পপি সেলিমার চিৎকার থামানোর চেষ্টা করেন। সেলিমা তার রুমে প্রবেশ করলে পপি তার মাকে ঝাপটে ধরেন। সঙ্গে থাকা চাকু দিয়ে পপি তার মায়ের গলায় পর পর তিনটি পোচ দেন। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। এ সময় সুবল বিদু্যতের সুইচ বোর্ড ভেঙে দুইটি তার বের করে সেলিমার মাথায় বৈদু্যতিক শক দেন। এতে সেলিমার মৃতু্য হয়। পরে লাশ বিছানার ওপর রেখে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখেন।
তিনি আরও জানান, পপি ও সুবলসহ বাড়ির লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় সেলিমাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সিএমএইচে নেন। চার দিন পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শাফিউর রহমান খান ওরফে শাফি বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৩৯। দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি সেলিমার মৃতু্য 'আত্মহত্যা' বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলছেন, পরবর্তীতে বাদীপক্ষের না-রাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তের ধারাবাহিকতায় বেরিয়ে আসে সেলিমার মৃতু্যর আসল রহস্য।
পিবিআই প্রধান জানান, গ্রেপ্তার সুবল কুমার রায়ের (৫০) পিতার নাম মৃত হরে কৃষ্ণ রায়। বাড়ি সাভারের দক্ষিণ পাড়ায়। তাকে চলতি বছরের ৩০ মে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে নিহতের মেয়ে শামীমা খান মজলিশ পপি (৫৭) ও সন্দেহভাজন আসামি আরতি সরকারকে (৬০) চলতি বছরের ৪ জুন সাভারের ভাগলপুর ও পাকিজা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুবল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পুরো বর্ণনা দেন। সেই বর্ণনা মোতাবেক নিহতের মেয়েসহ অপর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।