আবারও বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ জেলা। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে না পারায় ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানির তোড়ে পস্নাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর জেলার নিম্নাঞ্চল। ফেনীর মুহুরী ও কুহুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পস্নাবিত হয়েছে অন্তত ১০টি গ্রাম। ফুলগাজীতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদী পার হতে গিয়ে নৌকাডুবিতে তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে বন্যার কারণে পরশুরাম ও ফুলগাজীর চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রম্নত বাড়ছে। টানাবর্ষণে পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এসব এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
টানা বর্ষণে রাজধানীর ঢাকার নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। এ ছাড়া গত রোববার থেকে টানা বর্ষণে ইতোমধ্যে ডিএনডি এলাকার দেলপাড়ার কুতুবপুর এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।
মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বন্যাপ্রবণ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। ইতোমধ্যে পাঁচ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর উঠে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
ভারতের রাজ্যগুলোয় বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ি ঢলে জুলাইয়ের প্রথম ভাগে মধ্যমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, 'সুরমার পানি কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জ; কুশিয়ারার পানি অমলশীদ, শেওলা, শেরপুর-সিলেট ও মারকুলিতে; মনু নদীর পানি মৌলভীবাজারে; সোমেশ্বরীর পানি কলমাকান্দায় ও ভুগাইয়ের নাকুগাঁওয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে পাঁচ জেলার (সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা ও শেরপুর) নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে।'
এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানির সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী দুই দিনে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে এবং মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেট
সিলেট অফিস সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণে ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেট। নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা হিমাংশু চন্দ্র শীল বলেন, 'এ নিয়ে চলতি মৌসুমে তার ঘরে কয় দফা পানি উঠেছে মনে নেই তার। প্রতিবার পানি ওঠার পর ভাড়া ঘরটি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে চলে যান।'
এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার ৪টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর ওই পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সারী নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
সিলেটে এর আগে গত ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে আজ পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা।
গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পস্নাবিত হয়েছে ১৫১টি গ্রাম। পানিবন্দি রয়েছেন ১৯ হাজার ৭৫০টি পরিবার। নদ-নদীর পানি বেড়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে উদ্ধার কাজ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮১টি পরিবার ও ২৯টি গবাদিপশু আশ্রিত হয়েছে। সারী-গোয়াইন ও পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।
বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত
পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী ও কুহুয়া নদীর চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। সোমবার রাতে পানির তোড়ে ভেঙে যায় বাঁধ। জনপদ পস্নাবিত হওয়ায় পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের পূর্ব ঘনিয়ামোড়া এলাকায় কহুয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মো. মামুন (২৫) নামে এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। নিহত মামুন কিসমত ঘনিয়ামোড়া এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।
পরশুরামের ইউএনও আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, উপজেলায় দক্ষিণ শালধর গ্রামে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকার ১ হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, 'দুই উপজেলার বেশকিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার লোকজনের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।'
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ধস
খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণে বন্যার পাশাপাশি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোলা হয়েছে ১শ' আশ্রয় কেন্দ্র।
মঙ্গলবার সকালে মাটিরাঙ্গার সাপমারা এলাকার সড়কে পাহাড়ধসে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের চেষ্টায় ৪ ঘণ্টা পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটির সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
নৌকাডুবে নিখোঁজ তিনজন
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণে তাহিপুরের লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩০০ মিলিমিটার। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি নদী যাদুকাটা দু'তীর উপচে পাহাড়ি ঢল নােেছ গত ২ দিন ধরে। এতে অনেকের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দু'দফা ভোগান্তিতে পড়েছেন তাহিরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। প্রশাসন জানিয়ে উপজেলায় ৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ৩ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ডিঙি নৌকায় সুরমা নদী পার হতে গিয়ে স্রোতের প্রবল তোড়ে নৌকা দুই নারী ও এক শিশু নিখোঁজ রয়েছেন। এরা হলেন- দোয়ারাবাজার আদর্শগ্রাম আজমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা গোল বিবি (৭০), জ্যোৎস্না বেগম (৩০) ও তার এক বছরের সন্তান ময়না। এ ঘটনায় মাঝি সাঁতার কেটে তীরে আসতে পারলেও এ রিপোর্ট রেখা পর্যন্ত নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের ভাগ্যে খারাপ কিছুই ঘটে থাকতে পারে।
নেত্রকোনা থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলায় অন্তত ৮৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৬৮টি গ্রামে গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে বন্যার পানি ঢুকেছে। গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় পস্নাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।
টানা বৃষ্টিতে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রামবাসী
কাউছার আলম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চার দিন ধরে অঝোরে ধারায় ঝরছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ও বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টির আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে চট্টগ্রামে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, কমার্স কলেজসহ নগরীর বেশকিছু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। গেল শনিবার থেকে কখনো থেমে থেমে, আবার কখনো মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে কখনো গুঁড়িগুঁড়ি আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী লোকজনকে।
এ ছাড়া নগরীর পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, বাকলিয়া, কালামিয়া বাজার সড়কে হাঁটাচলায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। এ সড়কের পাশে খালে চলছে সিডিএ'র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ। এ কারণে বৃষ্টিতে সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে উঠেছে।
ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল নোয়াখালী
এদিকে টানা ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবেছে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী। শহরের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ এলাকা বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়েছে। পানি উঠেছে অনেক বাড়িঘরেও। ডুবে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। এতে বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আর গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০৯ মিলিমিটার। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।'
সাজেকে আটকা ৭ শতাধিক পর্যটক
রাঙামাটির সাজেকে ভ্রমণে গিয়ে প্রায় ৭ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। মঙ্গলবার সকালে বাঘাইছড়ি-বাঘাইহাট সড়ক উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। ফলে সাজেকে ছোট-বড় মিলে ১২৫ গাড়ির পর্যটক আটকা পড়েন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাজেক কটেজ মালিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার জানান, বাঘাইছড়িতে টানা ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। যাতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি। উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও এখনো কেউ আসেনি। আর বাঘাইহাট সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে পর্যটক আটকা পড়েছে। পানি না সরা পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না।
ডিমলায় তিস্তার পানি বাড়ছে
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের সিকিমের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কিছু এলাকা পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী খগা খড়িবাড়ী, খালিশা চাপানীর বাইশপুকুর, টেপা খড়িবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন এলাকায় বসবাসকারীরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫১.৮৫ সেমি। নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পাউবো।