হাইকোর্টের নির্দেশ

সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ দাখিলের বিধি মানতে হবে

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
.

সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে তা দাখিল-সংক্রান্ত বিধি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৩ বিধিটি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
শুনানির সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়ন ও সুশাসনের অন্তরায়। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলতেন- “সোনার বাংলা গড়তে চাই সোনার মানুষ”।’
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন। আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত।
বিধি অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিল ও তা প্রকাশ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস রিটটি করেন। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। 
রিটে আবেদনে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচারক ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব আইনে উল্লিখিত যথাযথ নিয়মে কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছি। সম্প্রতি আমরা দেখছি যে, সরকারের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার তথ্য       


গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে এত বিপুল সম্পদ অর্জন করেন, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছি।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ১১, ১২ ও ১৩ বিধিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের এ নির্দেশনা মানছেন না বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবী।’

রাষ্ট্রপক্ষ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী এ কে এম ফজুলল হক শুনানিতে অংশ নেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণীর নিদের্শনা চেয়ে পিআইএল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) করেছেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) শুনানি শেষে রুল জারি করেছেন আদালত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব আইন অনুযায়ী কেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুল। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।’
এদিকে, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার সংশোধিত ১৩ বিধির ভাষ্য, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে তার বা পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি ও মোট ৫০ হাজার টাকা বা ততধিক মূল্যের অলংকারসহ স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা করবেন। প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করবেন।
প্রসঙ্গত, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদ নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ারও ‘অবৈধ উপায়ে’ সম্পদ উপার্জনের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয়। বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমানের সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক।