দেশের পুঁজিবাজার
নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতায় 'গেইন ট্যাক্স' আরোপ
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
পুঁজিবাজারে 'ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স' বা মূলধনী মুনাফার ওপর কর দেওয়ার বিধান রেখেই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। মন্দা পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীদের ওপর গেইন ট্যাক্স আরোপ করাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসইসি অর্থ মন্ত্রণালয়কে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে কতটা কষ্টে রয়েছেন। এ অবস্থায় গেইন ট্যাক্স তো সরকার পাবেই না। বরং এর নেতিবাচক প্রভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারীরা।
গেইন ট্যাক্স আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে বিগত এক মাসের বেশি সময় ধরে টানা দরপতন হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক আগে থেকেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। কিন্তু বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানিয়েছিলেন 'গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে না।' পরে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনায় গেইন ট্যাক্স রাখা হয়। পরে বিএসইসি জানায়, চূড়ান্ত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স থাকবে না। এতে পতন কেটে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে শুরু করে শেয়ারবাজার। এরপর চূড়ান্ত বাজেট পাসের সময় দেখা যায় ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স রয়েছে।
ফলে বাজেট পাসের দিন অর্থাৎ রোববার লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারের দরপতন দেখা দিয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের আগেই পুঁজিবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। যদিও ঈদের আগে গুঞ্জন ছড়ায় চূড়ান্ত বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স থাকবে না। এতে ঈদের আগে দুদিন এবং ঈদের পর শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের যে ঘোষণা অর্থমন্ত্রী দিয়েছিলেন সেখান থেকে সরে আসেননি। শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স রেখেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এই বাজেট পাসের দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার ধারণা অব্যাহত থাকায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে লেনদেনে লেনদেনের শেষদিকে সূচকের পতন মাত্রা কিছুটা কমে। সর্বশেষ ২৭ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭০৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৬টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা।