ফের চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা বাড়ছে নদ-নদীর পানি
উৎকণ্ঠায় লাখ লাখ মানুষ
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-তিস্তা-গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছে। এতেই আবারও নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি জেলায়। কয়েক দিন আগেই বন্যা দেখা দিয়েছিল দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। তলিয়ে গিয়েছিল নদী তীরবর্তী অঞ্চল। টানা কয়েক দিনের ভোগান্তির পর নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এর রেশ না কাটতেই আবারও ধেয়ে আসছে বন্যা। এরই মধ্যে নদীগুলোর অনেকগুলো চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
আমাদের সিলেট অফিস জানায়, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটেও কদিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সোমবার সকালে জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবারসহ আগামী কয়েকদিন আরও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় পানি ছিল বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে। কিন্তু রোববার পর্যন্ত এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সিলেট ও ভারতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতের পাহাড়ি ঢলও আসছে। তাই রোববার সকাল থেকে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। সোমবার পানি আরও বেড়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীতে দ্বিতীয় দফায় ৬ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮. ৪২ সে.মি এসে দাঁড়িয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার খবরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর সেতু পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ৮.৫৫ সে.মি। ভারতের ঢল ও লাগাতার বৃষ্টিতে পানি আরেক ধাপ বেড়েছে। এছাড়াও জেলার মনু নদে আরও ৩২ সে.মি, ধলাই নদে প্রায় ২ মিটার ও জুড়ী নদে আরও ১৩ সে.মি পানি বেড়েছে। এতে জেলাজুড়ে বন্যাক্রান্ত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
সোমবার মুশুলধারে বৃষ্টিতে কুশিয়ারা নদী পাড়ে গেলে দেখা যায়, নদী পাড়ের মানুষের প্রায় সবার উঠানে হাঁটুসম ও ঘরে ১৫ থেকে ২০ সে.মি পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বসতির মায়ায় পানিবন্দি মানুষ ঘরের খাটের ওপর বসে সময় পাড় করছেন। আর খেটে খাওয়া ও নিম্নবৃত্ত মানুষের ঘরের খড়কোটোর বেড়া পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যাদের পাকা স্থাপনা রয়েছে, তাদের ছাঁদে কিংবা বারান্দায় পাশের বাড়ির কেউ কেউ ধান-চাল ও হাঁস-মুরগি রেখেছেন। কেউ কেউ এ সহযোগিতা না পেয়ে পাশের ওয়াপদা সড়কে ভ্রাম্যমাণ বসতি বানিয়ে গবাদি-পশু ও পরিবার নিয়ে থাকছেন।
নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নে ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫শ' নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি তরফ থেকে দুইবার ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল বলে দাবি করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, এসব ত্রাণ সহায়তায় তাদের চলে না। তারা পরিবার নিয়ে বেশিরভাগ সময় না খেয়ে রয়েছেন। বানভাসিদের দাবি সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠন যদি তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতেন তাহলে হয়তো তাদের বেশিরভাগ সময় উপোষ থাকতে হতো না।
এদিকে নদী পাড়ের উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের শামীম আহমদ বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় গরিব-দুস্থদের কাঁচা ঘরবাড়ি জলের গতি ও ঢেউয়ের বেগে ধসে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা আসছে না। সদরসহ দুই উপজেলার প্রায় ১ লাখ পানিবন্দি মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা থেকে বাঁচাতে হলে নদী খনন করা এখন সময়ের দাবি।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুপ্রভাত চাকমা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা কমে আসছে। আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও কমেছে। সরকারের তরফ থেকে দুই দফা ত্রাণ সমাগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান সোমবার জলমগ্ন এলাকায় গিয়েছেন।
মানুষের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুলের বিষয়টি জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, এরকম অভিযোগ আসেনি। অনেকে ত্রাণ পেলেও বলবে পাইনি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'জেলাজুড়ে ৯৪টি স্কুল জলমগ্ন রয়েছে, আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চালু রয়েছে ৬৪টি স্কুল। আগামী ৩ জুলাই স্কুল খুলবে। ওই সময় যদি বন্যার উন্নতি না হয়, তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেওয়া হতে পারে।'
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, জেলাজুড়ে ৩৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত রয়েছে।
গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় গোয়াইনঘাট উপজেলার সব নদ-নদীর পানি দ্রম্নত বাড়ছে। এতে গোয়াইনঘাট উপজেলায় তৃতীয় দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৮ জুন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তিন দিনে মোট ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তিন দিনে মোট ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গোয়াইন নদীর (গোয়াইনঘাট পয়েন্ট) পানি বিপৎসীমার দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে (বিপৎসীমা ১০.৮২ মিটার, প্রবহমান ১০.০৭ মিটার) পিয়াইন নদীর (জাফলং পয়েন্ট) পানি বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে (বিপৎসীমা ১৩.০০ মিটার, প্রবহমান ১২.০০ মিটার) ও সারি নদীর (সারি ঘাট পয়েন্ট) পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ০৫ মিটার (বিপৎসীমা ১২.৩৫ মিটার, প্রবহমান ১১.৩০ মিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নদ-নদীর পানি দ্রম্নত বৃদ্ধি পাওয়া এবং আগামী কিছুদিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় উপজেলায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাটে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলাবাসীকে আগে থেকেই সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। এ ছাড়া যেসব ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে সেগুলোর বাসিন্দাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।'
কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, আবারো উজান থেকে নেমে আসা তীব্র পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে তৃতীয় দফায় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কানাইঘাট সুরমা ও লোভা নদীর পানি তীব্র গতিতে বাড়তে থাকে। যার কারণে গত দু'দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পরপর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।
রোববার রাতে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার সকাল থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিকাল ২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাজারের গলিপথ, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বানের পানি ঢুকেছে। সুরমা ডাইকের ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গ্রামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারতের মেঘালয়সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দেওয়ায় সিলেট অঞ্চলে আবারো বন্যা হতে পারে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
রোববার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারো বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে এ নিয়ে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি বন্যা দেখা দিলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দেন।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি কমায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাহাড়ি নদী জাদুকাটাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী এমন কি হাওড়ের পানি কিছুটা কমেছিল। পানি কম থাকায় হাওড় উপজেলা তাহিরপুরে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবাভিক হয়ে এসেছিল। কিন্তু দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে সব নদ-নদীর পানি। এতে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন পড়েছে।
রোববার সকাল থেকে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকটা দিয়ে ঢলের পানি আঞ্চলিক সড়ক, বাজার উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। আর এই ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের আনোয়ারপুর নামক জায়গায় ডুবে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারেতর চেরাপুঞ্জিতে ১৮৬ মিলিমিটিার বৃষ্টি হয়েছে। সে পানি নেমে আসার কারণে সাময়িক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে সুনামগঞ্জে।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যেরগাঁও গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে নৌকাযোগে অনেকেই বাদাঘাটসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে যাতায়াত করছেন। অপরদিকে আনোয়ারপুর বাজার থেকে নৌকাযোগে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা দুর্গাপুর পর্যন্ত গিয়ে অনেকেই জেলা সদর সুনামগঞ্জে যাতায়াত করছেন।
বন্যা আক্রান্ত উজান তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের দক্ষিণহাটি গ্রামের হোসেন আহমদ জানান, রোববার রাতে প্রচুর বৃষ্টির সঙ্গে শনির হাওড়ের ঢেউয়ে তার বাড়ি কিছু ভেঙে গেছে।
একই ইউনিয়নের চিকসা গ্রামের আবু মুনামইম জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি রোববার রাত থেকে তার বাড়ি উঠোন দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বালিজুরী নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক এনামুল কবির বলেন, রোববার রাত থেকে তার বিদ্যালয়টি পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের সিএনজি চালক ইসলাম উদ্দিন বলেন, শনিবার বিকালে থেকে জেলা শহর সুনামগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভিন বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢল নেমে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে নদী-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সোমবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দৈই খাওয়া চরে ভূমিহীনদের আবাসন প্রকল্পের একটি পরিবারের দুইটি ঘর ব্রহ্মপুত্রের নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পুরো আবাসান প্রকল্প এলাকা। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পূর্ব দৈই খাওয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিজিবি ক্যাম্প ও কয়েক শতাধিক বাড়িঘর, ফসলি জমি। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ আবাসন প্রকল্পটিসহ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ মিটার বাঁধের রাস্তা, শতাধিক বিঘা আবাদি জমি এবং অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে বাঁধের বাজার সংলগ্ন সস্নুইসগেট, খামার দামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি।
সরেজমিন তিস্তা নদীর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বজরা ইউনিয়নের সাদুয়া দামারহাট ও খামার দামারহাট গ্রাম ভাঙনে বাড়িঘর ও বসতভিটা হারা মানুষ বাঁধের রাস্তা ও উঁচু জায়গায় পরিবার পরিজন ও গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, 'তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।'
সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, 'পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে দই খাওযার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যারয়, কাতলামারী গ্রাম, চর গেন্দার আলগা, চর গুজিমারী দই খাওয়ার চর। আবাসন প্রকল্পটিসহ এলাকার ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।'
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, 'ইতোমধ্যে সাহেবের আলগা ইউনিয়নে বিজিবি ক্যাম্পের পাশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদীভাঙনের মুখে পড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবাসন এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।'