বিদু্যৎ উৎপাদনে ঘাটতি বেড়েছে লোডশেডিং

২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করছে বিদু্যৎ বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ পায়রা ও আদানি তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের ২টি ইউনিট গ্যাস সংকটে বন্ধ ১৮টি বিদু্যৎ কেন্দ্র

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
সারাদেশে বিদু্যৎ পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে তীব্র হয়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। সর্বশেষ ৩০ জুন সরকারি হিসাবে চাহিদার তুলনায় বিদু্যৎ উৎপাদন ঘাটতি অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট। এ ছাড়া সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদু্যৎ উৎপাদন হ্রাসে প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী রোববার বিদু্যতের চাহিদা ছিল সকালে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ১২ হাজার ৬৪৭ ও ১৩ হাজার ৪৯৩ মেগাওয়াট। তবে সোমবার সারাদেশে বৃষ্টি হওয়ায় বিদু্যতের চাহিদা কিছুটা কম প্রক্ষেপন করা হয়েছে। এদিন দিনে বিদু্যতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং রাতে ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বিদু্যতের বর্ধিত চাহিদা পূরণে ঈদের আগে চালুকৃত বেসরকারি খাতের বেশকিছু তেলভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্র ও গ্যাস সংকটে গ্যাসভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্র বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে মূল সংকট হয়েছে পায়রা তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট ও আমদানিকৃত আদানি তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধের কারণে। এর বাইরে আদানির একই ক্ষমতাসম্পন্ন আরেক ইউনিটের যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বিদু্যৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই বন্ধ থাকা এই দুই ইউনিট পুনরায় উৎপাদনে ফিরবে। তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে গ্যাস সংকটের কারণে যেসব বিদু্যৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে তা পুনরায় উৎপাদনে ফিরতে আরও সময় লাগবে। মূলত আমদানিকৃত গ্যাসের সরবরাহ না বাড়লে এসব কেন্দ্র চালু করা যাবে না। পেট্রোবাংলার সূত্র জানিয়েছে এলএনজি খালাসে দুটি টার্মিনালের একটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যেই মেরামত শেষে টার্মিনালটির সার্ভিসে ফেরার কথা রয়েছে। এদিকে টানা লোডশেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গ্রামের লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অঞ্চলভেদে দিনের বেশিরভাগ সময় বিদু্যৎহীন থাকছে এসব এলাকা। বিশেষ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদু্যৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র পায়রা তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বেড়েছে। এর বাইরেও ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগেও বেড়েছে লোডশেডিং। বিপিডিবি'র হিসাবে ২৯ জুন বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং হয়েছে ১৮ মেগাওয়াট, রংপুর অঞ্চলে ৪৮ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১২০ ও ঢাকায় ১৮ মেগাওয়াট। সরকারি হিসাবে মোট লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ২১৪ মেগাওয়াট হলেও বেসরকারি হিসাবে এর পরিমাণ ২ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। দেখা গেছে, ২৯ জুন চাহিদার বিপরীতে বিদু্যৎ উৎপাদন পিক ও অফপিক উভয় সময়েই দেড় হাজার মেগাওয়াট কম ছিল। সে হিসাবে বিদু্যতের এই বিপুল ঘাটতি পুরোটাই লোডশেডিং করতে হয়েছে বিদু্যৎ বিভাগকে। এদিকে, ঈদের আগে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয় ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ারের ৮শ' মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদু্যতের একটি ইউনিট। যা জুলাইয়ের শুরতে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার পায়রা তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে। অপর একটি ইউনিট চালু থাকলেও বিদু্যৎ উৎপাদন হচ্ছে সক্ষমতার অর্ধেক, অর্থাৎ ৩৫০ মেগাওয়াটের মতো। অন্যদিকে, গ্যাস সংকটে গত ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ সারাদেশের প্রায় ১৮টি বিদু্যৎ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের সম্মিলিত বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৫৮৪ মেগাওয়াট। যার মধ্যে ৪শ' মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি, ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি ও সাড়ে ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি ২টি ও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি বিদু্যৎ কেন্দ্র রয়েছে। বিপিডিপির উৎপাদন বিভাগের প্রধান ওয়াজেদ আলি যায়যায়দিনকে জানান, একসঙ্গে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হ্রাসে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছিল। কিন্তু বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিদু্যতের চাহিদা কমতির দিকে রয়েছে। ফলে আগের তুলনায় লোডশেডিং কমবে। এ ছাড়া জুলাইয়ের ৫ তারিখের মধ্যে বন্ধ থাকা কেন্দ্র দুটি পুনরায় চালু হবে বলেও তিনি জানান। \হ