৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল
সর্বজনীন পেনশন 'প্রত্যয়' স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সর্বজনীন পেনশন স্কিম 'প্রত্যয়' নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির শুরু করেন তারা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-কার্যক্রম।
এর আগে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। পরে দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে একে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতার বাইরে থাকলেও সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষকরা।
প্রবাসী, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চারটি প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। পরে সব স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য 'প্রত্যয় স্কিম' নামে একটি নতুন স্কিম চালু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। স্কিমটি প্রত্যাহারের দাবিতে বেশ কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন প্রথম অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। এরপরও দাবির বিষয়ে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। একই দাবিতে গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও শিক্ষক নেতারা জোরালো বক্তব্য দেন। সর্বশেষ সোমবার থেকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা মোট তিনটি দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
তাদের দাবিগুলো হলো- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।
'প্রত্যয়' স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এ দিন সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের
তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। রোববার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
সোমবার সকালে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি ক্যাম্পাসজুড়ে পালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কর্তৃপক্ষের কর্মসূচিতে শিক্ষকদের অংশ না নেওয়ার যে ঘোষণা জিনাত হুদা রোববার দিয়েছিলেন, তা কার্যকর হয়নি। শিক্ষক সমিতির নেতাসহ শিক্ষকদের অনেকেই টিএসসিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে অংশ নেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা অনুষ্ঠানে ছিলেন না।
নিজামুল হক ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনেরও মহাসচিব। তিনি বলেন, দাবির বিষয়ে এখনো সরকারের কোনো পর্যায় থেকে তারা কোনো আশ্বাস পাননি। তাই তাদের কর্মসূচি চলবে। তিনি দাবি করেন, অসুস্থ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি।
এদিকে একই চিত্র দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ক্ষেত্রে। দুপুরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই মল চত্বরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। হলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সেখানে দেখা যায়। রেজিস্ট্রার ভবন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
রাবি প্রতিনিধি জানান, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।
এ দিন অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের অনেক সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য হতে দেখেছি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে না চলে তাহলে জাতির সামনে অশনি সংকেত অপেক্ষা করে। যেসকল মেধাবি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে তারা যদি মেধাবী শিক্ষক না পান তাহলে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারবে না। মেধাবী শিক্ষক পেতে গেলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে হবে। যেন তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন। তাদের আকর্ষণ করার জন্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। আরও কত সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করবেন। প্রতিবেশী অনেক দেশে শিক্ষকদের বেতন সাধারণ চাকরি থেকে অনেক বেশি? কিন্তু বাংলাদেশে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথা বার বার বলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি?
কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার ও রাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান।
বরিশাল অফিস জানায়, একই দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতির নেতারা। সোমবার থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সোমবার থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের সকল ক্লাস ও সব পরীক্ষা (অনলাইন কিংবা অফলাইন) বন্ধ থাকবে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অফিসিয়াল কার্যক্রম, সভা, সেমিনার, ল্যাব বন্ধ রাখবেন। একাডেমিক কমিটির সভা, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে না। অনুষদের ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে না। কোনো সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না। বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সেন্টারে কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা হবে। বিভিন্ন হলের অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে ও প্রধান প্রন্থাগারিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ রাখবেন।
পবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ কর্তৃক সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে একাডেমিক ভবন-১ প্রাঙ্গণের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হয়।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির আহ্বানে সারা দিন ওই অনুষদে এ কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান।
এ বিষয়ে পবিপ্রবির ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিন বলেন, 'আগে যেভাবে শিক্ষকরা পেনসন সুবিধা পেতেন এখন প্রত্যয় স্কিম এর আওতায় এসে সেসব সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বঞ্চিত হবেন।'
খুলনা অফিস জানায়, একই দাবিতে সোমবার থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আহ্বানে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুবিতে শিক্ষক সমিতির আয়োজনে এ কর্মবিরতি শুরু হয়।
খুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম ফিরোজ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী জানান, সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে সব ডিসিপিস্ননের ক্লাস, অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস, মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ডিসিপিস্নন অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার, ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষা, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ও হলের প্রভোস্টদের সংশ্লিষ্ট অফিসের কার্যক্রম, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ কর্মবিরতি চলাকালে অ্যাকাডেমিক ও মডারেশন মিটিং, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি, নিয়োগ ও পদোন্নয়ন সভা, ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাধর্মী ও প্রশিক্ষণ সেন্টারের পরিচালকরা সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন। বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, সুপার গ্রেড এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতির কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলাকালে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। খুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম ফিরোজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপিস্ননের শিক্ষক বক্তব্য দেন।
অপরদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে খুবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের আহ্বানে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুবি অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি পালন করা হয়। কর্মবিরতি চলাকালে ১ থেকে ৪ জুলাই প্রতিদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি তুলে ধরেন অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সভাপতি দীপক চন্দ্র মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল আলম হাওলাদার।
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল বিভিন্ন দাবিতে পৃথক পৃথকভাবে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তলা একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি উদ্যোগে পূর্ণদিবস এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অর্ধদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনকালে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম সাইফুলস্নাহ ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. মাসুদার রহমান প্রমুখ।
অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনকালে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের উপদেষ্টা ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম মজনু, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. ইকবাল বাহার বিদু্যৎ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদ খান ভাসানী প্রমুখ।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শিক্ষকরা সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কৃষি অনুষদ ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার বন্ধ থাকবে বলে বশেমুরকৃবি শিক্ষকরা একাত্মতা পোষণ করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. গোলাম রসুল, প্রফেসর ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. ইউনুছ মিঞা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বশেমুরকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. দেবাশীষ চন্দ্র আচার্য, এই প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। বশেমুরকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. অহিদুজ্জামান, অনতিবিলম্বে সরকার এ প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে শিক্ষকদের তাদের ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণা কাজে ফিরিয়ে আনার আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বেরোবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নিয়মিত শিক্ষা-কার্যক্রমে। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষকরা আহ্বান না করায় শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন না ক্লাসে, হচ্ছে না কোনো পরীক্ষা।
সোমবার সকালে একাডেমিক ভবনগুলো খুললেও কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কক্ষগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। কর্মচারীরা আসলেও তারা অলস সময় পার করছেন।
শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন কার্যকর না হওয়ায় পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বেরোবিতে সব ক্লাস, পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম ও প্রভোস্ট অফিস বন্ধ থাকবে।
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর। রোববার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সোমবার থেকে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে।
আমাদের জবি প্রতিনিধি জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে সশরীরে এবং সান্ধ্যকালীন ক্লাস বন্ধ রাখা রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া মিডটার্ম, ফাইনাল, মৌখিক ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো ধরনের পরীক্ষাই নেওয়া হচ্ছে না।
কর্মবিরতির প্রথম দিনে সোমবার দুপুরে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাশরিক হাসান বলেন, 'দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলমান থাকবে। এ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন কোনো কর্মসূচি যুক্ত হবে কি না, তা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেবে।'
বিকালে শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাতটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তবে শিক্ষকদের এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন ডাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিদুয়ান ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'নিজেদের স্বার্থচিন্তার পাশাপাশি আমাদের কথাও ভাবা উচিত শিক্ষকদের। কোভিড মহামারির কারণে ইতোমধ্যে আমরা প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেছি। ২০২৩ সালে আমাদের অনার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল, ২০২৪-এ এখন আমরা চতুর্থ বর্ষে। এখন শেষ বর্ষে এসে যদি আবার আটকা পড়ি, তাহলে তো চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ব। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, দেশের বাইরে যাবে অনেকে। আন্দোলন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে সবাই তো পিছিয়ে পড়বে প্রতিযোগিতামূলক জায়গাগুলো থেকে।'
অধিকাংশ বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা যথাসময়ে হওয়া নিয়ে শঙ্কিত গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চয়ন কৃষ্ণ দেব। তিনি বলেন, '১০ জুলাই থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা আমাদের। আমরা যাদের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে ঢোকার পরিকল্পনা করছি। তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ স্বাভাবিকভাবেই দেরি হয়, এখন আরও দেরি হবে। সব থেকে বড় যেই বিষয়ে শিক্ষক বেতনভাতা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এরপর তাদের নির্ধারিত কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা তো কোনো অন্যায় করিনি, তবে আমাদের কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।'
আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার দিকটাও যাতে নজরে আনতে শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
৩ জুলাই থেকে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এখন পরীক্ষা হবে কি হবে না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী অপূর্ব কর্মকার বলেন, 'চেয়ারম্যান স্যার বলেছেন, দাবি আদায় হলে পরীক্ষা হবে, নয়তো হবে না। এটা কেমন কথা? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই এমন খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।'
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাশরিক হাসান বলেছেন, 'শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ইতোমধ্যে তারা একটি মিটিং করেছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দাবি আদায় হয়ে গেলে অতিরিক্ত ক্লাস, অনলাইন ক্লাস নিয়ে ক্ষতিটা পূরণ করব।'